কর অব্যাহতি না থাকলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত পেছাবে, গোলটেবিলে অভিমত

ছবি সংগৃহীত

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদ্যমান কর অব্যাহতির সুবিধা আগামী জুনে শেষ হচ্ছে। কর অব্যাহতির এ সুবিধা যদি না থাকে, তবে এ খাতে বিনিয়োগ কমবে। ফলে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যপূরণও বাধাগ্রস্ত হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার ভবনে ‘স্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য করনীতির সুপারিশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিলে আলোচনায় বক্তারা এ মতামত দিয়েছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি) ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) যৌথভাবে এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।

একটি উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১১ সাল থেকে কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। ২০২০-২১ সালেই এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে পরে সরকার এ সুবিধার মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, রাজস্ব খাতে প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণের একটি উপায় হিসেবে রাজস্ব বিভাগ কর অব্যাহতির আওতায় থাকা খাতগুলো পর্যালোচনা করছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, তাঁদের বিদ্যমান কর–সুবিধা হয়তো আর নবায়ন করা হবে না। আগামী অর্থবছরের বাজেটে তা অব্যাহত রাখতে এ খাতের ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেন।

আলোচনার শুরুতে বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর এক উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি দেওয়ার কারণে সরকার বছরে ১ হাজার ৪৭৭ কোটি হারাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এ খাতে বছরে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা মুনাফা হতে হয়। কিন্তু বাস্তবে যে পরিমাণ মুনাফা হয়, তাতে সরকার ২০০–৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে না।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ, মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী স্নেহাশীষ বড়ুয়া জানান, আগামী ৩০ জুনের পর যদি কর অব্যাহতির সুবিধা না থাকে, তাহলে একটি প্রতিষ্ঠানকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতেই হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা তুলে নেওয়া হলে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যপূরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, কর–সুবিধা না থাকলে ব্যবসার অন্যান্য খরচ বেড়ে যাবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকেও পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

বেসিসের সহসভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা কর অব্যাহতি সম্পর্কে নীতিগত প্রস্তাব তৈরি করে তা সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এ খাতের উন্নয়নের জন্য নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার।

আলোচনায় বলা হয়, বর্তমান কর অব্যাহতির সুবিধা ন্যূনতম তিন বছর বহাল রাখা প্রয়োজন। এরপর পর্যায়ক্রমে তা প্রত্যাহার করে যেতে পারে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন ভিসিপিইএবির সভাপতি শামীম আহসান; আইআইডির নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ; চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ; সিন্দাবাদ ডটকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জিসান কিংশুক হক; আইফার্মারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ; ‘ট্রাক লাগবে’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েত রশিদ প্রমুখ।