রানারের দেশে তৈরি থ্রি–হুইলার অটোরিকশা এখন বাজারে

রানারের তিন চাকার অটোরিকশা তৈরির কারখানা ও বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আজ শনিবার ভালুকায় রানার অটোমোবাইলসের কারখানায়
ছবি: প্রথম আলো

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বাজাজের সহযোগিতায় দেশে এলপিজি ও সিএনজিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা তৈরি ও বাজারজাত শুরু করেছে রানার অটোমোবাইলস। রানার-বাজাজ ব্র্যান্ডের এই বাহনটি উৎপাদনে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হার অন্তত ৭০ শতাংশ হবে বলে মনে করছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রানার।

ভালুকায় রানার অটোমোবাইলসের কারখানায় আজ শনিবার থ্রি-হুইলার প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এর মাধ্যমে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো দেশে থ্রি-হুইলার অটোরিকশা তৈরির পরে তা বাজারে নিয়ে এল।

রানার-বাজাজ অটোরিকশার দাম কত হবে, তা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান জানায়নি, তবে স্থানীয়ভাবে এটি তৈরির ফলে এ বাহনটির দাম বাজারে প্রচলিত দামের তুলনায় কিছুটা কমে আসবে বলে ধারণা দিয়েছে। বাজাজ অটোর প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় দেশে তৈরি এসব থ্রি-হুইলার এখন বাজারে পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘দেশে উৎপাদন হলেও এখনো থ্রি-হুইলারটি তৈরিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো যন্ত্রাংশের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে আমরা এটা তৈরিতে সম্পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে চাই। রানার যে পথে হাঁটছে, তার ফলে সেটা হয়তো অদূরেই দেখা যাবে। সরকার রপ্তানিমুখী শিল্প নীতি ও অটোমোবাইলস শিল্পের প্রসারে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।’

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে, না হলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়তে পারে, এ কথা উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, বাজাজ প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে আছে। রানারকেও তাদের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

রানারের কারখানায় তৈরি হওয়া তিন চাকার অটোরিকশা। আজ শনিবার ভালুকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আমি আজকেই জানলাম, অনেক ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলারের নিবন্ধন নেই। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমরা এ-ও জানতে পারছি না যে কার গাড়ি কে চালাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।’

রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা রানারের কারখানায় বছরে ৩০ হাজার থ্রি-হুইলার অটোরিকশা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ইঞ্জিনের কিছু অংশ ছাড়াও ওয়েল্ডিং, ড্যামিস ও বডিসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হবে। এই কাজের জন্য নতুন করে আরও ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি বলেন, এই কারখানায় ৪০০ বিদেশি কর্মী কাজ করেছেন। দেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও আমাদের সহযোগিতা করেছে। সাধারণ মানুষের যোগাযোগের এই বাহন দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে।

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে রানারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সুবীর চৌধুরী বলেন, ‘রানার বাংলাদেশে মোটরসাইকেলশিল্পে প্রথম উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ থ্রি-হুইলার শিল্পে পা রাখলাম। আমাদের প্রত্যাশা, মোটরসাইকেলের মতো এই শিল্পেও আমরা সফলতা পাব।’

বাজাজ অটোর প্রেসিডেন্ট কে এস গৃহপতি বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের প্রথম কোন থ্রি-হুইলার কারখানা নয়, ভারতের বাইরে বাজাজ থ্রি-হুইলারেরও প্রথম কোনো কারখানা। আমরা রানারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।’

বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের উন্নয়নে বাজাজ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশে পাঁচ লাখের মতো থ্রি-হুইলার গাড়ি চলে, কিন্তু মাত্র এক লাখের নিবন্ধন আছে। এসব গাড়ি কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।
ইজিবাইকের নিবন্ধন পরিস্থিত আরও খারাপ এ কথা উল্লেখ করে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশের নানা জায়গায় ৫০ লাখের মতো ইজিবাইক চলছে, কিন্তু ‘এদের কোনো কিছুই নেই’। এসব বাহনকে একটি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

রানারের কারখানায় তৈরি হচ্ছে তিন চাকার অটোরিকশা। আজ শনিবার ভালুকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ এখনো তৈরিপোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন শিল্প দাঁড় করাতে হবে। অটোমোবাইল খাতে রানারের উদ্যোগ সেই পথ দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা মোটরসাইকেল রপ্তানি করছে। অটোমোবাইল খাতে ভালো করার জন্য শক্তিশালী সংযোগ শিল্প স্থাপন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর ও কাজিম উদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন উত্তরা মটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমানসহ অটোমোবাইল খাতের শীর্ষ প্রতিনিধিরা।