ব্যবসা–বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে

গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে তা পুরো অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে। সংকট কাটাতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, কয়লা উত্তোলন বাড়ানোসহ জ্বালানির বিকল্প উৎস সন্ধান করতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং রেশনিং করে করা হচ্ছে না। শিল্পকারখানায় লোডশেডিং হচ্ছে। আবার বাসাবাড়িতেও হচ্ছে। এতে কার্যকর কিছু হচ্ছে না।

এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানিনিরাপত্তা বিষয়ে এক সেমিনারে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সেমিনারে বক্তব্য দেন। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান জ্বালানি–সংকট আমাদের দেশীয় সমস্যা নয়। বিশ্বব্যাপী এটা হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য দেশের শিল্প থেমে থাকবে না। সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের পথে হাঁটছে। তবে দেশের কৃষি ও শিল্প খাতকে বাঁচিয়ে রেখে সব করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি খাতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমাদের জন্য বড় পরীক্ষা। সেই জায়গা থেকে জ্বালানি সাশ্রয়ের পথে হাঁটছে সরকার। দেশের স্বার্থে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’

নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান নিয়ে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘অনুসন্ধান করলে হয়তো কিছু গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। তবে তাতে গ্যাসের উৎপাদন খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। তাই জ্বালানি–সংকট ও নতুন গ্যাসের অনুসন্ধান নিয়ে বড় কোনো অঙ্গীকার করতে পারব না। যতটুকু সামর্থ্য আছে, সে অনুসারে অনুসন্ধানের চেষ্টা করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘ইউরোপের অনেক দেশ আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করতে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপে গ্যাস–সংকট শুরু হওয়ায় তাদের কেউ কেউ এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করছে। সুতরাং আমাদের এখন বাস্তববাদী হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে জ্বালানি নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘদিন থাকবে। এ জন্য আগামী ১০-২০ বছরে দেশের জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ূন রশিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিদ্দিক জুবায়ের প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন।