অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টায় চীন, কমিয়েছে আমানতের সুদহার
চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটির নীতিনির্ধারকেরা মানুষকে সঞ্চয় কম করে বেশি ব্যয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই চীনের বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের পর এবার আবারও আমানতের সুদহার কমানোর ঘটনায় বোঝা যায়, গত বছরের শেষ দিকে কোভিডজনিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতি অতটা শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
দেশটির ছয়টি রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ডিমান্ড ডিপোজিট বা চাহিদামাত্র উত্তোলন সুবিধাসম্পন্ন হিসাবের সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ করেছে। নির্দিষ্ট মেয়াদের আমানতের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।
সম্পদের দিক থেকে চীনের বৃহত্তম ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না পাঁচ বছর মেয়াদি আমানতের সুদহার ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়েছে। সেই সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি আমানতের সুদহার ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ করেছে।
অর্থনীতির সূত্রানুসারে, মানুষকে বেশি ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে, আমানতের সুদহার হ্রাস। প্রত্যাশা করা হয়, মানুষ ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে বেশি সুদ না পেলে তা উঠিয়ে ব্যয় করবে। এতে অর্থনীতি চাঙা হবে।
চীনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর এই উদ্যোগ থেকে বোঝা যায়, অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ভোক্তা ব্যয়ের গতি কমে গেছে। গত বছরের শেষ দিকে চীন কোভিডজনিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর আশা করা হয়েছিল যে মানুষের পুঞ্জীভূত চাহিদার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে, অর্থাৎ তারা মুক্তভাবে ব্যয় করা শুরু করবে। কিন্তু অর্থনীতির অনেক খাতেই বাস্তবে তেমনটা হয়নি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ম্যাকুয়ের গ্রুপের চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা ল্যারি হু নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, আমানতের সুদহার হ্রাসের মধ্য দিয়ে অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে আরও শিথিলতার পথ প্রশস্ত হলো।
ল্যারি হু মনে করছেন, অর্থনীতি চাঙা করতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না নীতি সুদহার কমানোসহ নানা ব্যবস্থা নিতে পারে। নীতি সুদহার কমানোর পাশাপাশি ব্যাংক আমানতের সুদহার কমানো হলে ব্যাংকিং খাতের আর্থিক চাপ অনেকটা কমতে পারে।
২০২০ সালে কোভিডের প্রথম বছরে বিশ্বের অন্যান্য বড় অর্থনীতি যেখানে হোঁচট খেয়েছিল, সেখানে চীন বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। কিন্তু ২০২২ সালের শেষভাগ পর্যন্ত তারা দফায় দফায় লকডাউন আরোপ করার ফলে ২০২২ সালে তাদের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশে নেমে আসে। সে জন্য তারা এ বছর মরিয়া হয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ বছর তারা ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করছে, কিন্তু অর্থনৈতিক দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মানুষের বিলাসী ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সেই প্রান্তিকে এতটা প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু পূর্বাভাস এখন অতটা সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে না।
চীনে তরুণদের বেকারত্বের হার রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। দেশটির বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অন্যতম বড় ক্ষেত্রে হচ্ছে আবাসন খাত। কিন্তু সেই আবাসন খাত গতি হারিয়েছে। তারা যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তেমন লক্ষ্যও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে আগামী মাসে চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে আরও কিছু প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হবে বলে অর্থনীতিবিদেরা আশা করছেন।
কিছু কিছু নতুন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাড়ি বিক্রি বাড়াতে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিপুল মধ্যবিত্তের দেশ চীনে গাড়ি বিক্রি অনেক দিন ধরেই জমজমাট, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি জমজমাট, সরকারের ভর্তুকি ও করছাড়ের কারণে তা আরও গতি পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বেইজিং বেশ কিছু নীতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে গাড়ি বিক্রি কমে গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধিতে তারা নীতি সুবিধা দেবে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বাড়াতে গ্রামাঞ্চলেও চার্জিং সুবিধা সম্প্রসারিত করা হবে।