মাহমুদা আক্তার মুক্তা (৩৫) স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। বাসায় থেকে থেকে মুটিয়ে যাচ্ছিলেন, রোগাক্রান্তও হয়ে পড়ছিলেন। তাই বছর দুই আগে ভোলার দক্ষিণ দিঘলদীর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পরে দুটি দেশি মুরগি কিনেছিলেন খাওয়ার জন্য। কিন্তু মুরগি দুটি না খেয়ে পালতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই দুটি মুরগিই ডিম পাড়া শুরু করে। এতে উৎসাহিত হয়ে তিনি মুরগি পালনে মনোযোগ দেন। বদৌলতে তাঁর এখন ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার দেশি মুরগি আছে। আর প্রতি মাসে আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি হয়।
ভোলা জেলা সদর ও দৌলতখান উপজেলায় মাহমুদার মতো প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ খামারি এখন নিজেদের বাড়ির আঙিনায় দেশি মুরগি পালেন। খামারিদের সফলতার হার ৭০ শতাংশের বেশি। সফলতার কারণ হিসেবে তাঁরা মুরগিকে দেশি গম-ধান, শাকসবজি ও উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ নামক খাবার খাওয়ানোর কথা বলেন। এতে মাংসের স্বাদ-গন্ধ ঠিক থাকে। ফলে ভালো দাম পাওয়া যায়।
বাড়িতেই তিনটি ঘরে মাহমুদা আক্তারের মুরগির খামার। তিনি প্রথম আলোকে জানান, এক দিনের বাচ্চা প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা, এক–দেড় কেজি ওজনের মুরগি ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। খামারের সবচেয়ে বড় ঘরে ইনকিউবেটর মেশিন (ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের যন্ত্র), খাবার তৈরির সরঞ্জাম ও ডিম পাড়া মুরগি ও মোরগ রাখা হয়েছে। এখানে প্রায় ৪০০টি ডিম পাড়া মুরগি ও মোরগ আছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০টি ডিম পাওয়া যায়। বাচ্চা ফোটানোর জন্য একবারে ৪০০ ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে বসানো হয়।
মাহমুদা জানান, ইউটিউব দেখে তিনি এ খামার শুরু করেন। তবে ভোলার গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তাঁকে এক দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ ছাড়া জিজেইউসের একজন চিকিৎসক নিয়মিত খামার পরিদর্শন করেন এবং পরামর্শ দেন। মাহমুদা বলেন, ‘আমার খামার আরও বড় করার ইচ্ছা রয়েছে। এর জন্য কয়েক একরের একটি জমি ইজারা নিয়েছি। সেখানে খামারের পাশাপাশি ধান, শাকসবজি ও ঘাসের আবাদ করব।’
মুরগি ও কবুতরের খামার করেছেন উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের সুফিয়া বেগম। তাঁর স্বামী গিয়াসউদ্দিন মাসুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। জিজেইউস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এক বছর আগে তিনি দেশি মুরগি ও কবুতরের খামার করেন। এখন তাঁর খামারে ৩০ জোড়া কবুতর ও বড় ৩৫০টি মোরগ-মুরগি আছে। সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ লাভ হয় বলে জানান তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, খামারিদের মধ্যে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও দেশি মুরগি বিতরণ করা হচ্ছে। এ জন্য ভোলার বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় দেশি মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রকল্প চালু আছে।