দেশে এক যুগে ফল খাওয়া বেড়ে দ্বিগুণ

ফল কিনতে দোকানে ভিড়
ফাইল ছবি

দেশের মানুষের ফল খাওয়া আগের চেয়ে বেড়েছে। তাতে গত কয়েক বছরে বাজারে দেশি-বিদেশি ফলের সমাহারও বেড়েছে। মানুষ এখন দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফলও বেশি খায়। ঈদসহ নানা উৎসব-পার্বণে মধ্যবিত্তের ঘরে ফল এখন অনেকটাই অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। এতে মানুষের খাদ্যতালিকায়ও পরিবর্তন এসেছে, খাদ্যতালিকায় বাড়ছে ফলের হিস্যা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যানও দেশে বেশি ফল খাওয়ার তথ্য দিচ্ছে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দেখা গেছে, গত এক যুগ আগে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে যত গ্রাম ফল খেত, এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২২ সাল শেষে দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯৫ দশমিক ৪ গ্রাম ফল খায়। ২০১০ সালে একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ৪৪ দশমিক ৭ গ্রাম ফল খেত। ২০১৬ সালে অবশ্য ফল খাওয়া আরও কমেছিল, তখন একজন মানুষ গড়ে ৩৫ দশমিক ৮ গ্রাম ফল খেত।

বিবিএসের হিসাবে, একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ১৩২ ক্যালরি খাবার গ্রহণ এবং অন্যান্য খরচ জোগাড় করতে পারলেই ওই ব্যক্তিকে আর গরিব হিসেবে ধরা হয় না। আর মোটাদাগে ১১ ধরনের খাবার খেলে দৈনিক ২ হাজার ১৩২ ক্যালরি পাওয়া সম্ভব। তবে প্রতিদিন সব খাবার একসঙ্গে খেতে হবে, তা নয়। তবে যেসব খাবার খেলে ক্যালরি পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে চাল, গম, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল, চিনি ও আলু। এই তালিকায় গত এক যুগের সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফল খাওয়া।

কয়েক দশক আগেই ফল মানেই ছিল গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও চারপাশের ফল-ফলাদির গাছ। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল—আরও কত কি। তখন বাণিজ্যিকভাবে দেশে খুব বেশি ফল উৎপাদিত হতো না। এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে আম, লিচু, পেয়ারা, জাম, তরমুজ, লটকন, আনারস, বেল, কমলা, কলাসহ প্রায় সব ধরনের দেশি ফল ব্যাপক হারে উৎপাদিত হয়। সেই সঙ্গে বিদেশি ফল উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এই তালিকায় আছে ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা, রাম্বুটান, রকমেলন ইত্যাদি।

ফল চাষে আগ্রহ বেড়েছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মেরেশানি এলাকায় ফল চাষ করেন এনামুল কবীর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে নিজ গ্রামে ফিরে শুরু করেন ফল চাষ। তাঁর পরিবার প্রায় ৫০ বছর ধরে লিচু চাষের সঙ্গে যুক্ত। এখন সেই চাষের হাল ধরেছেন এনামুল কবীর। লিচুবাগান সম্প্রসারণও করেছেন। পাশাপাশি করছেন মাল্টা চাষও।

এনামুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের মধ্যে এখন ফল খাওয়া বেড়েছে। বিশেষ করে দেশে উৎপাদিত ফলে আগ্রহ অনেক বেশি। ফলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লিচু ও মাল্টার গত তিন বছরে আরও দেড় শ লিচুগাছ লাগিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে এনামুল কবীর এখন সাত একর জমিতে ফল চাষ করছেন।

সরকারি সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পেয়ারা ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৩ টন, কলা ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৩ টন, পেঁপে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৩ টন ও কুল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৭ টন উৎপাদিত হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশি ফলের উৎপাদন ও বাজার দুটিই বেড়েছে। ফলে কৃষকেরা দেশি-বিদেশি উভয় ফলের চাষে ঝুঁকছেন।

দেশি ফলের চাষের পাশাপাশি বেড়েছে বিদেশি ফল আমদানিও। ডলার-সংকটের কারণে গত বছরের মে মাসে ফল আমদানির ওপর বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়, তা সত্ত্বেও ফল আমদানি কমেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মে থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ফল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ; অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কমলা ও আপেল আমদানি হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ লাখ ১৯ হাজার টন ফল আমদানি হয়েছে।

বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত এক যুগে মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার প্রবণতা দ্বিগুণ হয়েছে। বাজারে গেলে এখন নানা ধরনের দেশি ফল পাওয়া যায়। ফলের মৌসুমে দেশি ফলে বাজার সয়লাব হয়ে যায়।