দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) ভাঙার বিপক্ষে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। ফলে আপাতত বিভক্ত হচ্ছে না বহুজাতিক এ ব্যাংক। গতকাল শুক্রবার ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত এইচএসবিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
এইচএসবিসির চেয়ারম্যান মার্ক টাকার বলেছেন, এশিয়ার কার্যক্রমকে পৃথক করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য এইচএসবিসির বেশির ভাগ শেয়ারধারী তাঁকে ও বোর্ডকে সমর্থন করেছেন।
বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি শেয়ারধারী ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে এক–পঞ্চমাংশ ভোট এইচএসবিসি বিভক্ত করার প্রস্তাবের পক্ষে পড়েছে। বাকি সবাই এর বিপক্ষে তাঁদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
এইচএসবিসির সবচেয়ে বেশি লাভ আসে এশিয়া অঞ্চল থেকে। কিন্তু করোনা মহামারির সময় (২০২০ সালে) বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি এইচএসবিসি। পরবর্তীকালে দেওয়া লভ্যাংশের হার নিয়েও বিনিয়োগকারীদের আপত্তি রয়েছে। এর জেরে গত বছরের শুরুতে এইচএসবিসি এশিয়ার ব্যবসা পৃথক করার দাবি তুলেছিলেন হংকংভিত্তিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।
এ দাবির পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল চীনা কোম্পানি পিং আন ইনস্যুরেন্সের, যারা এইচএসবিসির প্রায় ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তারা গত বছর বলেছিল, ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদা করা হলে তা এ অঞ্চলের (এশিয়া) শেয়ারধারীদের জন্য লাভজনক হবে। পরে ব্যাংক বিভক্ত করার দাবি আরও জোরালো হয়। সেই রেশ থাকে পুরো বছর ধরে।
এ প্রক্ষাপটে এশিয়ার কার্যক্রম আলাদা করতে ভোটাভুটির জন্য এইচএসবিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি করেন লুই ইউ কিন নামের হংকংয়ের একজন স্বতন্ত্র শেয়ারধারী। সেই প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষেই গতকাল ভোটাভুটি হয়েছে।
যদিও এইচএসবিসির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংকটির ইউরোপীয় অংশীদারেরা শুরু থেকেই এ ধরনের কোনো প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছিল। যেমন এইচএসবিসির ৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক নরওয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নরজেস ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট চলতি সপ্তাহে জানিয়েছিল, তারা ব্যাংক বিভক্ত করার প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেবে।
এইচএসবিসির চেয়ারম্যান মার্ক টাকার ও প্রধান নির্বাহী নোয়েল কুইনও বারবার বলে আসছিলেন, শেয়ারধারীদের এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া উচিত।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে নোয়েল কুইন বলেন, ‘ব্যাংক ভাগের সিদ্ধান্ত শেয়ারের দামকে আরও কমিয়ে দিতে পারে। এতে আপনাদের লভ্যাংশও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’
এর আগে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, এশিয়ার ব্যবসা পৃথক করতে হলে অন্তত ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন লাগবে। এটা হলে কয়েক বছর ধরে অনিশ্চয়তার মুখে থাকতে হবে। এতে কর্মী ও গ্রাহকেরা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন।
পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভ
এদিকে বার্মিংহামে এইচএসবিসির বার্ষিক সাধারণ সভা চলাকালে সভাস্থলের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশবাদীরা। এর মধ্যে সভার ১২ মিনিটের মাথায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী বৈঠকে বাধা দেন। এ সময় এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী নোয়েল কুইন বারবার কথা বলা বন্ধ রাখেন। ফলে প্রায় এক ঘণ্টা স্থবির থাকে সভার কার্যক্রম।
জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অর্থায়ন কমাতে পরিবেশবাদীদের থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম এই ব্যাংক। শেয়ারধারীরাও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে এইচএসবিসি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোতে ঋণ দেওয়া কমিয়ে দেবে কি না। এর জবাবে চেয়ারম্যান মার্ক টাকার ও সিইও নোয়েল কুইন বলেছেন, তাঁরা জলবায়ু সমস্যাগুলোর বিষয়ে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছেন। শূন্য কার্বন নিঃসরণের পথে যেতে তাঁরা সঠিকভাবে অর্থায়ন করছেন।
এইচএসবিসি ছাড়াও এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী বার্কলেজ ব্যাংকের সভাও পরিবেশবাদীদের বাধার মুখে পড়েছিল।