সময়মতো খেজুর দেশে আসা নিয়ে উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের

ইফতারে সবার পছন্দ খেজুর
ছবি: প্রথম আলো

রোজার জন্য আমদানির অপেক্ষায় থাকা খেজুর সময়মতো দেশে আসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফল ব্যবসায়ীরা। আগের তুলনায় এবার ঋণপত্র কম খোলার কারণে খেজুর বন্দরে আসার পর তা জরুরি ভিত্তিতে খালাস করে বাজারে আনার ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারকেরা।

আজ সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক মতবিনিময় সভায় খেজুর ও ফল ব্যবসায়ীরা এসব কথা জানিয়েছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় দামি ফল আমদানিতে সরকারি বিধিনিষেধ ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁদের অভিমতও তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি রমজানে ৪০ হাজার টনের বেশি খেজুর লাগে। এবার এখনো এ পরিমাণ খেজুরের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়নি। যে পরিমাণ ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তা–ও রমজানের বাজার ধরতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ জন্য খেজুর বন্দরে আসার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড় করাতে হবে। অন্যথায় বাজারে দাম বেড়ে যেতে পারে। কারণ, সংকট থাকলে তখন স্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ে।’

দেশে চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ফল উৎপাদিত হয়—এ কথা উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাকি পরিমাণ ফল আমদানি করতে হয়। ফলকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বলা হলেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে একে বিলাসী পণ্য বলার সুযোগ নেই। বাজারে এখন কিছু মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীকে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে ফল আমদানি করছেন। তাঁদের থামাতে হবে। কারণ এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ফলের দোকানে মূল্যতালিকা থাকে না। বিক্রির সময়ে দামের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীদের এ বিষয়টি সুরাহা করতে হবে।

সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘অতি বিলাসী ফল আমদানি না করে তা কীভাবে দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তবে রমজানে যাতে সংকট না হয়, সে জন্য ঋণপত্র খোলার সুপারিশ করেছি আমরা। আমদানি করা এসব ফলের প্যাকেটজাত মোড়কের গায়ে আমদানিকারকের নাম ও মূল্য লিখে তা দৃশ্যমান করতে হবে।’ এ ছাড়া ফল কেনাবেচায় পাকা রসিদের প্রচলন কঠোরভাবে মানা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

নিউমার্কেটের ফল ব্যবসায়ী মো. শফিউল্লাহ বলেন, বাজারের বাইরে ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এখন সবখানেই ফলের দোকান দেখা যায়। এতে বোঝা যায়, বাজারে ফল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে নিয়মিত ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। যেসব ব্যবসায়ী ফলের ব্যবসার নামে ক্রেতাদের প্রতারিত করেন, তা থামানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম বলেন, বলা হচ্ছে বাজারে ফলের দাম বাড়তি। কিন্তু ৮৫ টাকার ডলার এখন কিনতে হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়। হিসাব করলে দেখা যাবে, শুধু ডলারের দাম যেটুকু বেড়েছে, সেই দামটুকুই বাজারে সমন্বয় হয়েছে। রমজানে যদি ফল লাগে, তাহলে আগেভাগে ঋণপত্র খুলতে দেওয়া উচিত। অন্যথায় সংকট দেখা দিতে পারে।

কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা আসলাম মিয়া বলেন, কয়েক হাত বদল হওয়ার কারণে ফলের দাম বেড়ে যায়। এটা বন্ধ করা গেলে ক্রেতারা কম দামে ফল কিনতে পারবেন।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সরকার যদি বিদেশি ফলের আমদানিতে স্থায়ীভাবে লাগাম টানতে চায়, তাহলে দেশীয় ফলের বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ আরও শক্তিশালী হতে হবে। দেশীয় ফল বিদেশি ফলের তুলনায় বেশি তাজা পাওয়া যায়।

মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ফলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।