ঋণ নিয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার, যুদ্ধে কত খরচ করবে ইসরায়েল
হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ তিন হাজার কোটি শেকেল ঋণ করেছে। এর অর্ধেকের মতো ঋণ নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। এ ক্ষেত্রে ডলার বন্ড ছেড়ে এই অর্থ তোলা হয়েছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে অর্থ তোলা হয়েছে, তার পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি শেকেল। এ ছাড়া সোমবার স্থানীয় আর্থিক বাজার থেকে বন্ডের নিলামের মাধ্যমে তোলা হয়েছে ৩৭০ কোটি শেকেল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলি মুদ্রার নাম শেকেল এবং প্রতি মার্কিন ডলার ৩ দশমিক ৯ শেকেলের সমপরিমাণ।
হামাসের বন্দুকধারীরা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের কয়েকটি শহরে হামলা চালায়। এরপর ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ চালালে যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে যুদ্ধের খরচ মেটাতে ইসরায়েলকে সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছে। এ ছাড়া, সীমান্ত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা–বাণিজ্য এবং ক্ষয়ক্ষতির শিকার ও জিম্মিদের পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দরকার হচ্ছে।
একই সময়ে দেশটির রাজস্ব আদায় কমে গেছে। ফলে অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের বাজেট ঘাটতি এক লাফে ২ হাজার ২৯০ কোটি শেকেলে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির বাজেট ঘাটতি ছিল ৪৬০ কোটি শেকেল। সব মিলিয়ে গত ১২ মাসে বাজেট ঘাটতি ২ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধের কারণে যত অর্থ দরকার হবে এবং অর্থনৈতিক ও বেসামরিক খাতে সহায়তার জন্য যে অর্থ লাগবে, তা জোগাতে মন্ত্রণালয় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধের কারণে যাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাঁদের জন্য সহায়তার দ্বার খুলে দেওয়া হবে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, যুদ্ধের ফলে আগামী বছর ইসরায়েলের জিডিপির তুলনায় ঘাটতি ও ঋণ বিপুলভাবে বাড়বে।
ব্যাংক অব ইসরায়েলের গভর্নর আমির ইয়ারন বলেন, অর্থনীতিকে সহায়তা দেওয়া এবং একটি যুক্তিযুক্ত রাজস্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়া।
ঋণমান নির্ণয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বলেছে যে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে তারা ইসরায়েলের ঋণমান কমিয়ে দিতে পারে। ব্যাংক অব ইসরায়েলের কাছ থেকে রাষ্ট্র ঋণ নিতে পারে, গণমাধ্যমের এমন খবর হিসাব মহানিরীক্ষকের দপ্তর নাকচ করে দিয়েছে। শেষ ১৯৮৬ সালে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল।
কত খরচ হবে ইসরায়েলের
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে কত খরচ হতে পারে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রাথমিক হিসাব করেছে। সেই হিসাবকে উদ্ধৃত করে অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদপত্র ক্যালকালিস্ট বলেছে, এই যুদ্ধে ইসরায়েলের ২০ হাজার কোটি শেকেল খরচ হতে পারে, মার্কিন মুদ্রায় যা ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
এই অর্থ ইসরায়েলের মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ শতাংশের সমান। এ হিসাব করতে কয়েকটি শর্ত বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো—যুদ্ধ ৮ থেকে ১২ মাস স্থায়ী হবে, এটি কেবল গাজায় সীমাবদ্ধ থাকবে, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরান কিংবা ইয়েমেন এই যুদ্ধে পুরোপুরি জড়াবে না এবং যে সাড়ে তিন লাখ সংরক্ষিত বা অতিরিক্ত ইসরায়েলি যোদ্ধাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা দ্রুত কাজে ফিরে যাবেন।
মন্ত্রণালয়ের এই হিসাবকে ‘আশাবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ক্যালকালিস্ট। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সংবাদপত্রের এই তথ্যকে সমর্থন করতে রাজি হয়নি।
এক মাসের বেশি আগে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় বোমাবর্ষণ করে চলেছে। তাদের লক্ষ্য হলো হামাসকে নির্মূল করা।
ক্যালকালিস্ট বলছে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা খাতে প্রতিদিন ১০০ কোটি শেকেলের মতো অর্থ খরচ করছে। এ ছাড়া, যুদ্ধের কারণে রাজস্ব খাতে ক্ষতি হবে চার থেকে ছয় হাজার কোটি শেকেল, ব্যবসার ক্ষতিপূরণ হিসেবে খরচ হবে দুই হাজার কোটি শেকেলের মতো এবং এক হাজার থেকে দুই হাজার কোটি শেকেল খরচ হবে পুনর্বাসনের পেছনে।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিখ এর আগে বলেছিলেন যে হামাসের হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ তৈরি করা হচ্ছে, যা কোভিড মহামারির সময়ে দেওয়া অর্থনৈতিক প্যাকেজের চেয়ে বেশি ও বিস্তৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, তাঁদের একটি শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে এবং যুদ্ধের জন্য যে মূল্যই দিতে হোক না কেন, তা দেওয়া হবে।
ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি ইসরায়েলের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস এরই মধ্যে ‘ঋণাত্মক’ করছে। অন্যদিকে, মুডিস ও ফিচ ইসরায়েলের ঋণমান পর্যালোচনা করছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেশটির ঋণমান কমিয়ে দিতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে।