সাড়ে আট মাস পর রাশিয়া থেকে গমের চালান বন্দরে

গম
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সাড়ে আট মাস পর রাশিয়া থেকে গম আমদানি শুরু হয়েছে। রাশিয়ার বন্দর থেকে প্রায় ৫২ হাজার ৮৪৫ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে এমভি সীলাক-২ নামের একটি জাহাজ। গতকাল বৃহস্পতিবার এই গম খালাস শুরু হয়েছে। গম আমদানি করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।

রাশিয়ার কাছ থেকে সরকার যে পাঁচ লাখ টন গম কিনছে, এটি তার প্রথম চালান। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টন গম কেনার অনুমোদন দেয়। সরকারি পর্যায়ে চুক্তির ভিত্তিতে (জিটুজি) খাদ্য অধিদপ্তর এই গম কেনার চুক্তি করে।

রাশিয়া থেকে বেশি দামে গম আমদানি নিয়ে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে প্রথম আলোতে ‘সরকার রাশিয়ার গম কিনছে বেশি দামে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ৫০ ডলার বেশি দামে গম কিনছে সরকার।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া থেকে আসা প্রথম চালানের গমের বন্দর পর্যন্ত আমদানিমূল্য পড়েছে টনপ্রতি ৪৩০ ডলার। এই গমের রপ্তানি করেছে রাশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান এলএলসি ওজেডকে ট্রেডিং।  

চট্টগ্রাম বন্দর ও শিপিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার নভেরোসিসক বন্দর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর জাহাজটি রওনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাজটি বন্দরের জলসীমায় পৌঁছে। জাহাজটি থেকে ৩১ হাজার ৭০৭ টন গম খালাস হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বাকি ২১ হাজার ১৩৮ টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, কুতুবদিয়ায় অবস্থানরত জাহাজটি থেকে বৃহস্পতিবার ছোট জাহাজে করে খালাস শুরু হয়েছে।

রাশিয়া থেকে সর্বশেষ গম আমদানি হয়েছিল এ বছরের ২৭ জানুয়ারি। আকিজ এসেনশিয়াল লিমিটেড ১০ হাজার টনের গমের চালান আমদানি করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এবারই প্রথম চালান এল বন্দরে। বেসরকারি খাতে এখনো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে গম আমদানি শুরু হয়নি। ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে গম আমদানির ঋণপত্র খুলেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। চালানটি এখনো বন্দরে পৌঁছায়নি।

বাংলাদেশে চালের পর দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। ভাত ছাড়া যত ধরনের খাদ্য তৈরি হয়, তার বেশির ভাগেই গম ব্যবহৃত হয়। দেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় আটা তৈরির সাধারণ আমিষযুক্ত গম। এসব গমের অন্যতম উৎস রাশিয়া-ইউক্রেন ও ভারত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে সবচেয়ে বেশি গম আমদানি হতো রাশিয়া থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি থেকে মোট আমদানির ২৭ শতাংশ আনা হয়।

জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় এবং যুদ্ধের পর আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে গত অর্থবছরে তা সাড়ে ছয় শতাংশে নেমে আসে। গমের চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করে মেটানো হয়। রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে ৬২ লাখ টন গম আমদানি হয়।

সরকারের হাতে গমের মজুত এখন সবচেয়ে কম। আমদানি করে গমের মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বুলগেরিয়া থেকে টনপ্রতি ৪৬০ ডলারে প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম আমদানি করে সরকার। বুলগেরিয়া থেকে গমের চালানবাহী জাহাজ থেকে এখনো খালাস চলছে। আবার বন্দরে আসা রাশিয়ার গমের চালান খালাস হলে সরকারের হাতে গমের মজুত বাড়বে। রাশিয়া থেকে বাকি সাড়ে চার লাখ টনের চালান ডিসেম্বরে দেশে পৌঁছানোর কথা।