যেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ
এবার চীনের বৃহত্তম আবাসন কোম্পানি এভারগ্রান্ডের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত করা হচ্ছে। কোম্পানিটি এমনিতেই বিপুল পরিমাণে ঋণগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে তাদের টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
২০১২ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর সি চিন পিং দেশটির অনেক ব্যবসায়ীর ওপর খড়্গহস্ত হয়েছেন। সেই তালিকায় এবার নতুন করে যুক্ত হলেন ৬৪ বছর বয়সী হুই কা ইয়ান। ১৯৯৬ সালে তিনি চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে এভারগ্রান্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সেসব ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে, যাঁরা সি চিন পিংয়ের জমানায় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
দেখে নেওয়া যাক, কারা আছেন এই তালিকায়।
ঝাও উয়েইগো
চলতি বছরের মার্চে চিপ কোম্পানি সিংগুয়া ইউনিগ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ঝাওয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের জন্য মুনাফা অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত এই কোম্পানি চীনের চিপ শিল্পের প্রধান কোম্পানি হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ঝাওয়ের জমানায় এই সিংগুয়া ইউনিগ্রুপ বড় অঙ্কের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা যেমন চিপসংক্রান্ত অন্যান্য কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে, তেমনি আবাসনসহ অন্যান্য খাতের কোম্পানির মুনাফা না করা কোম্পানিও অধিগ্রহণ করে। ফলে একসময় তারাও বন্ডের সুদহার পরিশোধ করতে ব্যর্থ এবং ২০২০ সালের শেষ ভাগে দেউলিয়াত্বের মুখোমুখি হয়।
বাও ফান
চায়না রেনেসাঁ হোল্ডিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বাও ফানকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয়। আগস্টে এই বিনিয়োগ কোম্পানি জানায়, তিনি সরকারি কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছেন। তবে তদন্ত ঠিক কী বিষয়ে করা হচ্ছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি। বাও একসময় ক্রেডিট সুইস গ্রুপ ও মর্গ্যান স্ট্যানলির হয়ে কাজ করেছেন। বলা হয়, তিনি চীনের সবচেয়ে বহুল পরিচিত ব্যাংকার। তিনি এখন কোথায় আছেন, তা কেউ জানেন না।
ঝিয়াও জিয়ানহুয়া
টুমরো হোল্ডিংসের প্রতিষ্ঠাতা ঝিয়াও জিয়ানহুয়াকে ২০১৭ সালের পর আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ২০২২ সালে তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয় এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ৮১০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়।
ঝিয়াও জিয়ানহুয়া চীনা-কানাডীয় নাগরিক। জানা যায়, একসময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে হংকংয়ের এক বিলাসবহুল হোটেল থেকে চোখ বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাংহাই আদালত ঝিয়াও জিয়ানহুয়ার বিরুদ্ধে রায়ের সময় বলে, তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে নজরদারি এড়িয়েছেন এবং অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন।
চেন ফেং, চেয়ারম্যান এবং ট্যান শিয়ানংডং, প্রধান নির্বাহী, এইচএনএ গ্রুপ
২০২১ সালের ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চেন ফেং ও ট্যান শিয়ানংডংকে চীনা পুলিশ তুলে নিয়েছিল। ওই বছরই এইচএনএ গ্রুপকে দেউলিয়া প্রশাসনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এইচএনএ গ্রুপের সবচেয়ে সুপরিচিত ব্যবসা হাইনান এয়ারলাইনস। ২০১০–এর দশকে এই গ্রুপ পাঁচ হাজার কোটি ডলার খরচ করে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি কিনে নেওয়া শুরু করে। তবে এর জন্য তারা ঋণ করে। যেসব ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করে তার মধ্যে ছিল ডয়েচ ব্যাংক ও হিলটন ওয়ার্ল্ডওয়াইড। এর মাধ্যমে তারা একটি ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।
চীনের আরও যেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আনব্যাং ইনস্যুরেন্স গ্রুপের উ ঝিয়াওহুই, চায়না এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা ইয়ে জিয়ানমিং প্রমুখ।