নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেনতেন বিনিয়োগ নয়: সিপিডি

আজ বৃহস্পতিবার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির খসড়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে যেনতেনভাবে বিনিয়োগের সুযোগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু শর্ত দেওয়া উচিত। কারণ, এর আগে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের অনুমতি নিয়ে অনেকেই তা শেষ পর্যন্ত করেননি।

আজ বৃহস্পতিবার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির খসড়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এসব কথা বলে। ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে নতুন খসড়ায়।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অতীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের প্রকল্প নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ বুঝি নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য উপযোগী নয়। কাকে প্রকল্প দেওয়া হচ্ছে, তাদের এ ধরনের প্রকল্প করার সক্ষমতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, এ পর্যন্ত ৩৬টি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮টি চালু আছে। বাকিগুলো বিনিয়োগে যায়নি। বেশির ভাগ অনুমতি নিয়ে বসে আছে। একটি উদাহরণ দিয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কিছুদিন আগে খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি চার্জিং স্টেশন করা হয়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সেখানে চার্জ করতে নেওয়া হয় না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনটি বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি। এই আইনের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সিপিডির বক্তব্য হলো এ ধরনের আইনের প্রয়োজনীয়তা ২০০৯ সালে ছিল। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারকে এখন বিপুল বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। কোনো বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এটি করা হতে পারে। এতে দুর্নীতির সংশ্লেষ থাকতে পারে।

সিপিডি আরও বলছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শর্ত দিয়েছে, ভর্তুকি কমাতে হবে। তাই বিদ্যুৎ খাতের সব ভর্তুকি ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার যে ভর্তুকি দেয়, তা নিয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

এ বিষয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ দায়ী নয়। তিনি আরও বলেন, সরকার ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে প্রায় ১৫ টাকা। বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন দরপত্র উন্মুক্ত করা উচিত। ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রণোদনা বন্ধ করে দিলেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সম্প্রসারণ হবে। বিদ্যমান নিয়মকানুন ও প্রণোদনা দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না।

পারমাণবিক জ্বালানি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্লিন এনার্জি (পরিবেশবান্ধব) বলা হচ্ছে। কিন্তু এটি এখনো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি নয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য হয়।

সিপিডি সুপারিশ করেছে, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (শ্রেডা) সংস্কার প্রয়োজন। তাদের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। বড় ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।