রড ও সিমেন্টশিল্প খাত শুল্ক-করে ছাড় চায়

  • বিসিএমএ সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানিতে টনপ্রতি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

  • ক্লিংকার, স্ল্যাগ, লাইমস্টোন, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম আমদানিতে অগ্রিম আয়কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএমএ।

সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত অগ্রিম কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন উৎপাদকেরা। এ ছাড়া এই অগ্রিম কর চূড়ান্ত দায়ের পরিবর্তে সমন্বয় করার প্রস্তাবও রেখেছেন তাঁরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নেতারা এই দাবি জানান। ঢাকার আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

বিসিএমএ সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানিতে টনপ্রতি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, স্ল্যাগ, লাইমস্টোন, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম আমদানিতে বর্তমানে যে ৩ থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয় সেটি কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছে সংগঠনটি। এ ছাড়া বিসিএমএ লাইমস্টোন আমদানিতে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। 

বিসিএমএর সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘সিমেন্ট একটি উদীয়মান শিল্প খাত। ২০০০ সালের দিকে এই শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। কিন্তু কোভিড এবং সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক চাপের কারণে সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ে খারাপ যাচ্ছে। অগ্রিম কর হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হচ্ছে, সে অনুযায়ী মুনাফা করতে পারি না। ওই অগ্রিম কর চূড়ান্ত দায় হওয়ায় বছরের শেষে করের সঙ্গে সমন্বয় করা যায় না। তাই চূড়ান্ত দায় হিসেবে অগ্রিম কর কেটে রাখার বিধান বাদ দেওয়া উচিত। অগ্রিম করের পরিমাণও কমানো দরকার।’ 

সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, স্ল্যাগ, লাইমস্টোন, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম আমদানিতে অগ্রিম আয়কর কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব।  

আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠন 

স্ক্র্যাপ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ)। সংগঠনটির মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদউল্লাহ বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংগঠন রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে তারা প্রতি টনে অগ্রিম কর ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা কাটার দাবি জানিয়েছে। 

এ বিষয়ে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের স্বল্পতা আছে। ফলে দেশের বাজারে রডের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এই ক্রান্তিকালে শুল্ক–কর কমানো দরকার। শুল্ক–কর কমলে বাজারে দাম সমন্বয় করা সম্ভব হবে। 

বিএসএমএর সাবেক সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম বলেন, স্থানীয় পর্যায় থেকে স্ক্র্যাপ সরবরাহের ওপর ভ্যাট নেই। কিন্তু ভ্যাট কর্মকর্তারা তা মানতে রাজি নন। স্থানীয় পর্যায় থেকে স্ক্র্যাপ সরবরাহে ভ্যাট না থাকার অন্যতম কারণ হলো, অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করা হয়। 

বর্তমানে সারা দেশে উন্নত প্রযুক্তির ১২০টি অটোব্রিকস কারখানা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়। এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অটোব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি বি এন দুলাল বলেন, ‘অটোব্রিকস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে তার মোট বিক্রির ওপর দশমিক ৬ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হয়। কাঁচামাল কেনার সময় উৎসে কর কেটে রাখা হয়। কিন্তু কাঁচামাল হলো মাটি। কিন্তু মাটি বিক্রেতা, মানে নিম্ন আয়ের মানুষের টিআইএন নেই। তাই আমাদের ওই উৎসে কর দিয়ে দিতে হয়। বিষয়টির মানবিক দিক বিবেচনা করে এই উৎসে কর প্রত্যাহার করা উচিত।’

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে—এমন কথা বলে আপনারা শুল্ক–কর ছাড় চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদেরও রাজস্ব আদায়ের চাপের বিবেচনায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’ তবে তিনি প্রস্তাবগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন।

গতকাল সকালে দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) নেতারাও বাজেট আলোচনায় অংশ নেন। সংগঠনটির সভাপতি আবদুর রহমান খান বলেন, টিআইএন থাকলে রিটার্ন দিতে হবে কেন? যাঁদের করযোগ্য আয় নেই, তাঁরা কেন কাগজপত্র এনে রিটার্ন দেবেন। ২৫ লাখ টাকার কম সম্পদ আছে, এমন টিআইএনধারীর (করযোগ্য আয় না থাকলে) রিটার্ন জমায় ছাড় দেওয়া উচিত।