আপনি চাইলে আপনার করের পরিমাণ বেশ কমিয়ে ফেলতে পারবেন। এ জন্য একটু কৌশলী হতে হবে। আয়ের একটি অংশ অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। মানুষকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতেই এ ধরনের বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আবার আপনি সারা বছরের আয়ের কিছু অংশ দান করলেও কর কমে যাবে।
মনে রাখতে হবে, কর রেয়াত নিতে এত দিন বছরে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। চলতি অর্থবছর থেকে তা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে।
মোট ৯টি খাতে বিনিয়োগ করলে আপনি কর রেয়াত পাবেন। কর রেয়াত নিতে সাধারণ করদাতাদের জন্য সবচেয়ে সহজ বিকল্প হলো সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে আপনিও নিতে পারবেন কর রেয়াত। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে টাকা খাটিয়েও কর রেয়াত পাওয়া যাবে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কিনলেও তা বিনিয়োগ হিসেবে ধরবেন কর কর্মকর্তারা। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেও একই সুবিধা মিলবে।
অনেকে ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএস করেন। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলে অর্থাৎ বছরে ৬০ হাজার পর্যন্ত টাকা রাখলেও কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। এর মানে, ডিপিএস করাও একধরনের বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এ ছাড়া আরও ছয়টি খাত আছে, যেখানে আপনি বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাবেন। এ খাতগুলো হলো—জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার এনুয়েশন ফান্ডে চাঁদা।
যেকোনো জায়গায় দান করলে কর কমবে—এটা ভাববেন না। মোটাদাগে ১৩টি খাতে দান করলে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। এগুলো হলো জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান; জাকাত তহবিল; জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনুমোদিত দাতব্য হাসপাতাল; প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান; মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক; আহছানিয়া ক্যানসার হাসপাতাল; ঢাকা আহছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল; এশিয়াটিক সোসাইটি; আইসিডিডিআরবি; সিআরপি; মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান এবং সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
কর রেয়াত নেওয়ার নিয়ম
কর রেয়াত পেতে এসব খাতে একজন করদাতা বছরের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দান করতে পারবেন। এর বেশি করলে অতিরিক্ত অংশের কর রেয়াত মিলবে না। ওই বিনিয়োগকারী বা দানশীল করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে মোট বিনিয়োগ ও দানের ১৫ শতাংশ কর ছাড় মিলবে। ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে। কর রেয়াত নিতে হলে রিটার্ন ফরমের সঙ্গে ২৪ডি তফসিল ফরম পূরণ করতে হবে।
একটি উদাহরণ দিই, ধরুন, আপনি ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত আট লাখ টাকা আয় করেছেন। নিজের খরচ বাঁচিয়ে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এবার একটু হিসাব করা যাক, আপনার করযোগ্য আয়ের প্রথম তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে ৫ হাজার টাকা; পরের তিন লাখের জন্য ১০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার টাকা এবং পরের এক লাখের জন্য ১৫ শতাংশ হারে ১৫ হাজার টাকা কর হবে। সব মিলিয়ে করের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা।
আপনি দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। যেহেতু মোট আয়ের ২৫ শতাংশের মধ্যেই আছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ। আর আয়সীমাও ১৫ লাখ টাকার মধ্যে আছে। তাই বিনিয়োগ করা ওই দুই লাখ টাকার ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবেন। যেহেতু আপনার করযোগ্য আয়ের ওপর করের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু আপনাকে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা কর।