প্রথমবার রিটার্ন দিচ্ছেন, সতর্ক থাকুন
আপনি কি জীবনে প্রথমবারের মতো এ বছর আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে যাচ্ছেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনাকে দুটি বিষয় জরুরিভাবে মনে রাখতে হবে। জীবনের প্রথম বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন তৈরিতে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে সম্পদ বিবরণী ও পারিবারিক ব্যয় বিবরণী তৈরিতে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আপনাকে মাশুল গুনতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ নতুন করদাতা কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছেন। তাঁরাই এবার প্রথমবারের মতো রিটার্ন দিতে যাচ্ছেন। প্রথমে আসা যাক, সম্পদ কতটা দেখাবেন। জীবনের প্রথম রিটার্নে সম্পদ বিবরণীতে কোনো কিছুই লুকানো যাবে না। অনেকে ভাবতে পারেন, এ বছর সব সম্পদ দেখাব না। এ বছর কিছু সম্পদ দেখাব, আগামী বছর আরও কিছু সম্পদ দেখাব। এভাবে ধীরে ধীরে কর নথিতে সম্পদ দেখাব। কিন্তু এটি পুরোপুরি ভুল পদক্ষেপ। প্রথম বছরের রিটার্নেই সব সম্পদ দেখিয়ে দিন। তাহলে পরে আর ঝামেলায় পড়বেন না।
উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, আপনার জমিজমাসহ বাসার যাবতীয় ইলেকট্রনিক পণ্য, আসবাবপত্র সবই প্রথমবার দেখিয়ে ফেলুন। এমনকি বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া স্বর্ণালংকারও বাদ দেবেন না। এ ছাড়া যদি নগদ টাকা থাকে, তা-ও যেন বাদ না পড়ে। ধরুন, আপনি যদি কর নথিতে এ বছর একটি জমি দেখান, পরের বছর আরেকটি জমি দেখাবেন। কিন্তু পরের বছর যে জমি রিটার্নে দেখাবেন, তা কেনার অর্থ কোথায় পেলেন সেই উৎস আপনাকে দেখাতে হবে। এক বছরের মধ্যে ওই জমি কেনার সামর্থ্য আছে কি না, তাও বিবেচনায় আনতে পারেন কর কর্মকর্তারা।
অথবা ধরা যাক, আপনার ঘরে হয়তো ৫০ ভরি স্বর্ণ আছে। প্রথম বছর ৩০ ভরি দেখিয়েছেন। পরের বছর বাকি ২০ ভরি দেখাতে গেলেই কোথায় সেই টাকা পেলেন, তার বৈধ উৎস দেখাতে হবে। একইভাবে দামি আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে টাকার উৎস দেখাতে হবে। মোটা দাগে বলা চলে, প্রথম বছর রিটার্নে আপনি যে সম্পদ দেখাবেন, সেটাই আপনার সম্পদের ভিত্তি। পরের বছর যত সম্পদ যোগ হবে, তা অর্জনে যে অর্থ ব্যয় করলেন সেটির বৈধ সূত্র বা উৎসের তথ্য আপনাকে জানাতে হবে।
নতুন করদাতাদের আরও মনে রাখতে হবে, বাড়ি-গাড়ি কিংবা ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে আয়কর বিবরণীর পাশাপাশি আলাদা ফরমে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে।
নতুন করদাতাদের অনেকেই নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। যেমন প্রথমবার দেওয়া রিটার্নে বেশি বেশি করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকার মতো সম্পদ দেখান। অর্থাৎ যেসব সম্পদ আছে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখিয়ে থাকেন। কারণ, প্রথমবার রিটার্ন জমাদানকারী করদাতাদের প্রতি কর কর্মকর্তারা কিছুটা সদয় থাকেন। সম্পদে যা দেখান, কোনো প্রশ্ন না করে বেশির ভাগ সময় সেই সম্পদের বিবরণী মেনে নেন তাঁরা। তবে আয়কর কর্মকর্তার যদি সন্দেহ হয় যে সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশি দেখানো হয়েছে, তাহলে নতুন ওই করদাতার বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
নতুন করদাতাদের আরও মনে রাখতে হবে, বাড়ি-গাড়ি কিংবা ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে আয়কর বিবরণীর পাশাপাশি আলাদা ফরমে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে।
এবার আসা যাক, পারিবারিক ব্যয় বিবরণী তৈরির কথায়। প্রথমবার রিটার্ন জমাকারী করদাতারা মনে রাখবেন, আপনার আয়ের সঙ্গে পারিবারিক খরচ যেন সংগতিপূর্ণ থাকে। যেমন আপনি ছোটখাটো ব্যবসা করেন কিংবা চাকরি করেন, কিন্তু বাস করেন অভিজাত এলাকায়, সন্তানেরাও নামীদামি স্কুলে পড়াশোনা করে এবং বছর-বছর পরিবার নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যান। তাহলে বিপাকে পড়তে পারেন। আবার উল্টোও হতে পারে। প্রথম বছর সাধারণ জীবনযাপনের পারিবারিক খরচ দিলেন। কিন্তু আয় তেমন না বাড়লেও পরের বছর বিলাসী জীবনযাপনের তথ্য দিলেন, তাহলেও বিপদ। সে জন্য আপনি যা আয় করেন, সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করেন কি না, তা ব্যয় বিবরণীতে তুলে ধরুন।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৬৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ নতুন করদাতা টিআইএন নিয়েছেন। তাঁদের এ বছর রিটার্ন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু জমি বেচাকেনা বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জন্য যাঁরা টিআইএন নিয়েছেন, তাঁদের রিটার্ন দিতে হবে না।