ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদনে পার পাওয়ার দিন শেষ

  • আয়কর বিবরণীর সঙ্গে জমা করা নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদন সঠিক কি না, তা আইসিএবির তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই করা যাবে।

  • এ নিয়ে ১২ নভেম্বর আইসিএবি ও এনবিআরের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই হবে।

  • শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আইসিএবির আরেকটি চুক্তি হতে পারে।

ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়ে পার পাওয়ার দিন এবার শেষ হচ্ছে। এত দিন এ ধরনের প্রতিবেদন দেখিয়ে যেসব কোম্পানি কর কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়েছে, তাদের জন্য দুঃসংবাদ আসছে। খোদ দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) মাধ্যমেই কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করবেন কর কর্মকর্তারা।

আইসিএবি ইতিমধ্যে ‘ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম’ নামে একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছে। সংস্থাটির নিবন্ধিত যেকোনো হিসাববিদের প্রস্তুত করা প্রতিটি নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনসহ যাবতীয় তথ্য ওই সফটওয়্যারে আপলোড করতে হবে। ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেওয়া নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদন সঠিক কি না, তা যাচাই করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা। এতে ভুয়া প্রতিবেদন জমার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।

এবার দেখা যাক, কীভাবে পুরো ব্যবস্থাটি কাজ করবে। আগামী মাস থেকে আইসিএবির সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির যত হিসাব নিরীক্ষা করবেন, সেগুলোর প্রায় সব তথ্য তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে ওই সফটওয়্যারে দিতে হবে। তথ্য দেওয়ার পর সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনের অনুকূলে একটি ‘ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড’ দেবে। মোটা দাগে, কোম্পানির মোট আয়-ব্যয়সহ কিছু সাধারণ তথ্য দিতে হবে, যা ওই কোড দিয়ে প্রবেশ করলেই যেন দেখা যায়।

বর্তমানে প্রতিটি কোম্পানির লাভ-ক্ষতির হিসাব দিয়ে প্রতিবছর এনবিআরে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান আছে। বিবরণীর সঙ্গে নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়। এখন থেকে ওই প্রতিবেদনে আইসিএবি সফটওয়্যার থেকে প্রাপ্ত ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড থাকতে হবে। কর কর্মকর্তারা তখন আইসিএবির সফটওয়্যারে দেওয়া ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোডটির সঙ্গে এনবিআরে জমা করা প্রতিবেদনের ভেরিফিকেশন কোডটি মিলিয়ে দেখবেন। এরপর ওই কোড ব্যবহার করে আইসিএবিতে জমা করা প্রতিবেদনের যাবতীয় তথ্য দেখতে পারবেন কর কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে ১২ নভেম্বর আইসিএবি ও এনবিআর একটি সমঝোতা চুক্তি সই করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে এনবিআরকে আইসিএবির তথ্য ব্যবহারের আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজন করা হবে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জানতে চাইলে আইসিএবির সহসভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এই সফটওয়্যার চালু হলে কেউ যদি এনবিআর বা অন্য কোথাও ভুয়া নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদন জমা দেন, তাহলে তা বেরিয়ে আসবে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। তিনি জানান, অনেক সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে দেন বলে অভিযোগ আছে। এটি ভুল প্রমাণিত হবে। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে প্রতিবেদনের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবে না।

আইসিএবি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদন যাচাই–বাছাই করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ফলে সেসব দেশে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা পড়ে। বর্তমান সনাতনী উপায়ে সব নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই–বাছাই করা কঠিন। কিন্তু আইসিএবির সদস্যরা প্রতিবছর ১৫-১৬ হাজার নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে থাকেন। প্রতিবেদনগুলো ভুয়া কি না, তা যাচাই–বাছাই করার সুযোগ এত দিন ছিল না। সাধারণত কোম্পানির বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমার সময় নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে অংশীদারির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থাসহ (এনজিও) কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমার সময় নিরীক্ষা প্রতিবেদন পায় এনবিআর।

আইসিএবি সূত্রে আরও জানা গেছে, শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য জানার বিষয়ে তাদের চুক্তি হতে পারে। অভিযোগ আছে, সহজে ব্যাংকের ঋণ পেতে অনেক প্রতিষ্ঠান ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে মুনাফা বেশি দেখায়। আইসিএবির সঙ্গে চুক্তি হলে কর কর্মকর্তাদের মতো ব্যাংক কর্মকর্তারাও একই প্রক্রিয়ায় ঋণ প্রস্তাব দেওয়া প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই–বাছাই করতে পারবেন।