৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে আয়কর রিটার্ন জমার সময়, অনলাইন কীভাবে দেবেন

আয়কর রিটার্ন

এক দফা সময় বাড়ানোর পর ৩১ ডিসেম্বর করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার শেষ দিন। এ সময়ের মধ্যে করদাতাদের বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের খবর জানিয়ে রিটার্ন দিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এবার সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন দিতে হবে।

বর্তমানে দেশের প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। করযোগ্য আয় থাকলে টিআইএনধারীদের রিটার্ন দিতে হয়।

মাত্র ১০ দিনের মতো সময় আছে। এবার যেহেতু অনলাইনে রিটার্ন দিতে হবে, তাই সাপ্তাহিক বা বিশেষ ছুটির দিনেও ঘরে বসেই রিটার্ন দিতে পারবেন।

শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া নয়

তাই সময় শেষ হওয়ার দু-এক দিন আগে রিটার্ন জমায় তাড়াহুড়া করবেন না। এতে নানা ধরনের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন—

১. ভুলের ঝুঁকি বাড়ে

তাড়াহুড়ায় আয়-ব্যয়, করছাড় ও উৎসে করের হিসাব মিলতে ভুল হতে পারে। তাই সময় নিয়ে সাবধানে হিসাব-নিকাশ করতে হবে।

২. কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকে

শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সনদ ও রসিদ ঠিকভাবে যাচাইয়ের সময় পাওয়া যায় না। এখনো সময় আছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে রাখুন।

৩. অনলাইন পোর্টালের চাপ

শেষ দু-তিন দিন কর রিটার্ন জমার সিস্টেমে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, লগইন ও সাবমিটে সমস্যা হয়। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা না করাই ভালো।

৪. জরিমানা ও জটিলতা

সময় পেরিয়ে গেলে জরিমানা বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়ায় পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।

৫. কর পরিকল্পনার সুযোগ হারান

আগেভাগে জমা দিলে বৈধ করছাড় ও সমন্বয়ের সুবিধা ভালোভাবে হিসাব–নিকাশ করে নেওয়া যায়।

৬. সংশোধনে ভোগান্তি

ভুল হলে রিটার্ন সংশোধনে বাড়তি সময় ও দপ্তরে ঘোরার প্রয়োজন পড়ে। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ায় এমন ভুল বেশি হতে পারে।

৭. মানসিক চাপ বাড়ে

শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপে অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ ও চাপ তৈরি হয়।

এবার দেখা যাক কীভাবে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেবেন।

অনলাইনে দেবেন কীভাবে

সব করদাতাকে রিটার্ন দিতে হলে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে জমা দিতে হবে। এ জন্য প্রথমে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিয়ে পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনি আপনার রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন বা ই-রিটার্ন দিতে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে হয় না। এসব কাগজের তথ্য দিলেই হবে। তবে যেসব কাগজের তথ্য দেবেন, তা সংরক্ষণ করবেন। কারণ, ভবিষ্যতে নিরীক্ষা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে কাগজপত্র চাইলে যেন তা দিতে পারেন।

কীভাবে কর দেবেন

অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার সময় ঘরে বসেই কর দিতে পারবেন। যেমন ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

যেসব কাগজপত্র লাগে

রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আপনার নানা ধরনের কাগজপত্রের তথ্য লাগবে। তাই অনলাইনে রিটার্ন জমার ফরম পূরণের আগেই এসব কাগজ জোগাড় করে রাখা জরুরি।

যেসব কাগজপত্র লাগবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় বা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষাঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।

বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পেতে চাইলেও কিছু কাগজপত্রের তথ্য লাগবে। যেমন জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলের চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ ইত্যাদি।