মাসে ৪ হাজার ৯৬১ টাকা জমিয়ে হতে পারেন মিলিয়নিয়ার

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সামাজিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেখানে নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে, বাংলাদেশে তেমন ব্যবস্থা একেবারেই কম। এ বাস্তবতায় নাগরিকদের নিজস্ব সঞ্চয়ের বিকল্প নেই।

যাঁদের আয়-উপার্জন বেশি, তাঁদের জীবনে সামাজিক নিরাপত্তার তেমন প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয়তা আছে। এই শ্রেণির মানুষের জন্য দেশের বিভিন্ন ব্যাংক দিচ্ছে মিলিয়নিয়ার স্কিম। অর্থাৎ মাসে মাসে টাকা জমিয়ে মেয়াদ শেষে ১০ লাখ টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা, যদিও সেখান থেকে কর কেটে রাখা হবে। শেষমেশ পুরো ১০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে না।

সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, আপনি নিজের আয়ের মধ্যে কত টাকা সঞ্চয় করবেন, তা আগে ঠিক করুন। এরপর ব্যয় করুন। যদিও দেশের বেশির ভাগ মানুষ যেটা করেন, সেটা হলো আগে ব্যয় করে পরে সঞ্চয় করা। সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা থাকলে সীমিত আয় সত্ত্বেও মোটামুটি ভালো সঞ্চয় করা যায়।

দেশের পুরোনো ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) আছে মিলিয়নিয়ার স্কিম। এই স্কিমের আওতায় মাসে ৪ হাজার ৯৬১ টাকা জমিয়ে ১০ বছর শেষে ১০ লাখ টাকা পাওয়া সম্ভব। ফলে সীমিত আয়ের মানুষেরা সহজেই এই স্কিম নিতে পারেন।

গ্রাহক কত দিনে ১০ লাখ টাকা জমাতে চান, সেটা নির্ভর করবে তাঁর সক্ষমতার ওপর। গ্রাহক যদি ১০ বছরের আগে ১০ লাখ টাকা জমাতে চান, তাহলে স্বল্প মেয়াদে এই স্কিম নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যাবে। যেমন ৯ বছরে ১০ লাখ টাকা জমাতে হলে মাসিক কিস্তি দিতে হবে ৫ হাজার ৮২২ টাকা। ৮ বছরে ১০ লাখ টাকা জমাতে মাসিক কিস্তি দিতে হবে ৬ হাজার ৯১৩ টাকা।

এই স্কিমের মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর। ফলে মেয়াদ যত বেশি, কিস্তির পরিমাণ তত কম; মেয়াদ যত কম, কিস্তির পরিমাণ তত বেশি। ৭ বছর মেয়াদে কেউ ১০ লাখ টাকা জমাতে চাইলে তাঁর মাসিক কিস্তি হবে ৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। ছয় বছর মেয়াদে করলে কিস্তি হবে ১০ হাজার ২৪৬ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদে কিস্তি হবে ১২ হাজার ৯৪৯ টাকা।

এই স্কিমের বিশেষ দিক

১. মাসের যে তারিখে এই ডিপিএস হিসাব খোলা হবে, প্রতি মাসের সেই দিন কিস্তি জমা দিতে হবে।

২. সাত দিনের গ্রেস পিরিয়িড থাকবে। অর্থাৎ কিস্তি জমা দেওয়ার নির্ধারিত তারিখের সাত দিনের মধ্যে বিনা জরিমানায় কিস্তি দেওয়া যাবে।

৩. কিস্তি বাকি পড়লে এই হিসাবের সুদের হারের ভিত্তিতে জরিমানা করা হবে।

৪. ব্যাংকের যে শাখায় এই ডিপিএস খোলা হবে, সেই শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব থাকলে সরাসরি সেই হিসাব থেকে কিস্তির টাকা কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ফলে কিস্তির টাকা জমা দিতে লাইনে দাঁড়াতে হবে না।

৫. ডিপিএস ন্যূনতম এক বছর চলার পর জমা টাকার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে।

কী লাগবে

হিসাব খুলতে সাধারণত যেসব কাগজপত্র লাগে, এ ক্ষেত্রেও তা লাগবে। আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব আছে, এমন একজন পরিচয়দানকারী। ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে সবার স্বাক্ষর লাগবে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম–ঠিকানাও দিতে হবে।

শুধু ইউসিবি নয়, দেশের আরও কিছু ব্যাংক মিলিয়নিয়ার স্কিম দিয়ে থাকে, যেমন ইস্টার্ন ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ইত্যাদি। এ ধরনের ডিপিএস খোলার আগে ব্যাংকের অবস্থা বুঝে নিন, সব ব্যাংকের অবস্থা এক রকম নয়।