সঞ্চয়পত্র নাকি শেয়ার, কোথায় বিনিয়োগ করবেন

বিনিয়োগপ্রতীকী ছবি

একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এ দেশের মানুষ জমানো টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারেন না কোথায় বিনিয়োগ করবেন। এ জন্য লোকসানেও পড়তে হয়।

এ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দ্বিধাও। যেমন শেয়ারবাজারে যাবেন নাকি নিরাপদ পথ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন? দুই ক্ষেত্রের ঝুঁকি ও মুনাফা আলাদা রকম।

আপনি কোনটা বেছে নেবেন, তা নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং বিনিয়োগের সময়সীমার ওপর।

নিচে সঞ্চয়পত্র নাকি শেয়ার কিনবেন—এই দুই ধরনের বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে প্রধান পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হলো।

১. নিরাপত্তা বনাম ঝুঁকি

সঞ্চয়পত্র সরকারনির্ভর বিনিয়োগ, তাই ঝুঁকি খুব কম। সরকার নিজেই গ্যারান্টি দেয়। তাই মূল টাকা হারানোর আশঙ্কা নেই।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে লাভের সুযোগ বেশি। বিনিয়োগে ঝুঁকিও বেশি। বাজারের ওঠানামায় মূলধন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বিনিয়োগকারী।

২. মুনাফার হার

সঞ্চয়পত্রে মুনাফা নির্দিষ্ট ও স্থির থাকে। এখন যেমন, মেয়াদ পূর্ণ হলে ১১-১২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এদিক থেকে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। প্রতি মাসে মুনাফা তোলার সুযোগও আছে। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার খরচ চালানোর কিছু অংশ আসে এই মুনাফার টাকায়।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা নেই। কখনো দ্বিগুণ, তিন গুণ, চার গুণ লাভ হতে পারে। আবার আপনি লোকসানের মুখেও পড়তে পারেন। দীর্ঘ মেয়াদে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে রিটার্ন সঞ্চয়পত্রের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। তাই আপনি কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন, ওই কোম্পানি কতটা ভালো, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার বিনিয়োগের টাকার কী হবে।

৩. যখন-তখন ভাঙানো বনাম মেয়াদ পূর্তির আগে নয়

এখানে সঞ্চয়পত্রে পিছিয়ে আছে। কারণ, শেয়ার আপনি যেকোনো সময় বিক্রি করে নগদ টাকায় পরিণত করতে পারেন। ফলে টাকার দরকার হলে শেয়ার বিক্রি করা যাবে। তবে কেনা দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে।

অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে টাকা তুললে জরিমানা বা মুনাফা কমার ঝুঁকি থাকে।

৪. কর ও নিয়মনীতি

সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কাটা হয় এবং বিনিয়োগসীমা নির্দিষ্ট থাকে। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত একক নামে কেনা যায়।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ডিভিডেন্ডে কর কম, আবার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে মূলধনি লাভের ওপর কর তুলনামূলকভাবে কম। ফলে কর-সাশ্রয়ের দিক থেকেও শেয়ার কিছুটা এগিয়ে আছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। আপনি যত ইচ্ছে বিনিয়োগ করতে পারেন।

তবে সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজার—উভয় ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ আছে।

৫. বিনিয়োগের লক্ষ্য

যদি আপনি স্থিতিশীল, ঝুঁকিমুক্ত আয় চান, তাহলে সঞ্চয়পত্র ভালো।

আর যদি দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্য থাকে—তাহলে শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করাই যুক্তিযুক্ত।

মনে রাখবেন

নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল আয়ের জন্য সঞ্চয়পত্র, আর উচ্চ মুনাফা ও প্রবৃদ্ধির জন্য শেয়ারবাজার—এই দুটিকে ভারসাম্য রেখে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।