ছয় মাসের মাথায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার আরেক দফা কমছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পরের ছয় মাসের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ নতুন হার নির্ধারণের একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। বিভাগটি এ–সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের অনুমোদনের জন্য তাঁর দপ্তরে জমা দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন করলেই অর্থ বিভাগ তা পাঠিয়ে দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি)। আইআরডি তখন পরিপত্র জারি করবে। গতকাল রোববার অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তাবটি এখনো আমার কাছে আসেনি। তবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির স্বার্থে ব্যাংকারদের দিক থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কিছুটা কমানোর একটা দাবি আছে। সার্বিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন মুনাফার হার ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। নতুন প্রস্তাবে এ হার গড়ে দশমিক ৫ শতাংশ করে কমতে পারে। তবে কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার বর্তমান হারের মতোই তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে। আর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে কম। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা এর কম হলে মুনাফার হার হবে বেশি। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে কম।
সরকার আয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে নিয়মিতভাবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গত ৩০ জুন। গড় মুনাফার হার কিছুটা কমিয়ে তখন বলা হয়েছিল, ছয় মাস পর মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। ৩১ ডিসেম্বর ছয় মাস পূর্ণ হবে।
আইআরডি সচিব মো. আবদুর রহমান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুনাফার হার বাড়ছে না কমছে, বলতে পারব না। পুরো বিষয়টি এখন অর্থ বিভাগ দেখছে। অর্থ বিভাগের সুপারিশ এলে আমরা পরিপত্র জারি করব।’
দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন যত ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ১ জুলাইয়ের আগে এ হার ১২ শতাংশের বেশি ছিল।
বর্তমানে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ পূর্তিতে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে মুনাফার হার তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ, সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাবের মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বেশি হলে স্বাভাবিক কারণেই সঞ্চয় চলে যায় সরকারি তহবিলে। এ হার একটু কমলে তা ব্যাংকে আসবে, যা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। যদিও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন যা, তাতে ঋণের চাহিদাই তো কম। বেসরকারি খাতকে ঋণ দিতে না পারলে সেটিও ব্যাংক খাতের জন্য একধরনের বোঝা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জুলাই-অক্টোবরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট ঋণ ঋণাত্মক ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।