ব্যাংকে টাকা জমানোর সময় এখন, কী খেয়াল রাখবেন
ব্যাংকে টাকা জমা রেখে একসময় যে সুদ বা মুনাফা মিলত, তা দিয়ে ব্যাংকের হিসাব পরিচালনার খরচ মেটানোই কঠিন ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। তখন ব্যাংকে গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে যে সুদহার দেওয়া হতো, তা মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ব্যাংকে আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এতে অনেক গ্রাহক ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার আটকে রাখায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
এখন সুদহারের নির্দিষ্ট সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়তে শুরু করেছে ব্যাংকের আমানতের সুদ। কোনো কোনো ব্যাংক তো সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে। ফলে অনেক আমানতকারী আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছেন। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যে সুদ দিচ্ছে, তাতে এখনই ব্যাংকে টাকা রাখার উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ, পরে এত সুদ না-ও মিলতে পারে। আর এখন বেশি সুদে টাকা জমা রাখার পর সুদ কমলেও আপনি বেশি সুদ পাবেন। তবে মনে রাখবেন বেশি সুদ দিলেই সেই ব্যাংকে ঝাঁপ দিয়ে টাকা রাখবেন না। দেখে নেবেন ব্যাংকটি ভালো, না খারাপ।
কিছু কিছু ব্যাংকে আমানতের সুদহার ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। আপনি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট মেয়াদে জমা রাখতে চান, তাহলে এখন ভালো সুদ মিলছে। সাড়ে ৫ বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে টাকা জমা নিচ্ছে। আর প্রতি মাসে টাকা জমা দিলেও মেয়াদ শেষে ভালো সুদ মিলছে।
তবে সাধারণ তত্ত্ব হলো, যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যত দুর্বল, তার আমানতের সুদ তত বেশি। ফলে সুদ বেশি দেখে টাকা রাখবেন, নাকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি ও ভাবমূর্তি দেখে টাকা জমা রাখবেন, সেই সিদ্ধান্ত আপনারই।
কোথায় মিলছে কত মুনাফা
এখন মোটামুটি সব ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা জমা রেখে ভালো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকগুলো সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের চেয়েও বেশি সুদ দিয়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, টাকা জমা রাখলে সবচেয়ে কম সময়ে দ্বিগুণ হচ্ছে এক্সিম ব্যাংকে, মাত্র ৫ বছর ৪ মাসে। এরপর সাড়ে ৫ বছরে টাকা দ্বিগুণ হচ্ছে এবি, প্রিমিয়ার ও ন্যাশনাল ব্যাংকে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক টাকা রাখলে সাড়ে ৬ বছরে ও রূপালী ব্যাংকে ৬ বছর ৯ মাসে দ্বিগুণ হচ্ছে।
ইউসিবিতে টাকা রাখলে দ্বিগুণ হচ্ছে ৬ বছর ৯ মাসে, এনসিসি ব্যাংকে ৬ বছর ১১ মাসে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও ট্রাস্ট ব্যাংকে টাকা রাখলে দ্বিগুণ হচ্ছে ৭ বছর ৩ মাসে। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকে টাকা রাখলে দ্বিগুণ হচ্ছে ৯ বছরে।
টাকা জমা করার আগে অবশ্যই সেই ব্যাংক সম্পর্কে খোঁজ নেবেন। এ ছাড়া ওই মাসে সুদের হার কত, তার খোঁজ নেবেন। কারণ, এখন ব্যাংকগুলো সুদের হার প্রায়ই পরিবর্তন করছে।
যা ভাববেন
ব্যাংকে রাখার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। এবার সেই বিষয়গুলো দেখা যাক।
এক. মেয়াদি আমানতের মেয়াদ যাচাই করুন। সুদের হার বেশি হলে দীর্ঘমেয়াদি আমানতে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তবে ভবিষ্যতে দরকার পড়লে আগেভাগে ভাঙাতে হলে জরিমানা দিতে হতে পারে।
দুই. মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সুদের হার তুলনা করুন। প্রকৃত লাভ বোঝার জন্য শুধু সুদের হার নয়, মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করুন।
তিন. ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখুন। ব্যাংকটি স্থিতিশীল কি না, খেলাপি ঋণের হার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিবেচনা করুন।
চার. স্থায়ী আমানতের বিপরীতে তাৎক্ষনিকভাবে ঋণ সুবিধা আছে কি না, দেখুন। কিছু ব্যাংক এ সুবিধা দেয়। তাই টাকার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়।
পাঁচ. করের দিকটি বিবেচনায় নিন। সুদের আয়ে কর কাটা হয়। কর নথিতে সবকিছু পরিষ্কারভাবে জানাতে ভুলবেন না।