ছাদবাগানের সরঞ্জাম কোথায় পাবেন, দাম কত

শহরমুখী মানুষের চাপে রাজধানী শহর ঢাকায় গাছগাছালির পরিমাণ ক্রমেই কমছে। তবে কিছুটা সবুজের ছোঁয়া নিতে মানুষ এখন ছাদে কিংবা বারান্দায় ছোট পরিসরে বাগান তৈরি করছেন। এমন ছাদবাগানের ধারণা দ্রুতই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এমন বাগান করতে কী কী লাগে, কোথায় পাওয়া যায় বা সরঞ্জামের দাম কত, তা জানা প্রয়োজন।

ছাদবাগান করতে গাছের পাশাপাশি নানা ধরনের সামগ্রী লাগে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। এসব নার্সারিতে ছোট চারাগাছের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বাগানের যাবতীয় সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি। যেমন গাছ লাগানোর মাটি থেকে শুরু করে গাছের টব, পানি দেওয়ার স্প্রে মেশিন, পাতা কাটার কাঁচি, বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, সার ইত্যাদি।

দাম কত

সম্প্রতি এসব যন্ত্রের দাম নিয়ে কথা হয় আগারগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন বিক্রেতাদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্লাস্টিকের টব পাওয়া যায় ৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। পানি দেওয়ার যন্ত্রের দাম ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। আগাছা নিড়ানি পাওয়া যায় ২৫০ টাকার মধ্যে। পাতা কাটার কাঁচির দাম পড়বে ৪০০ টাকা ও এর আশপাশে।

এ ছাড়া বিভিন্ন জাতের পোকার ওষুধ পাওয়া যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। সারের ছোট প্যাকেট পাওয়া যায় ২০ থেকে ৫০ টাকায়। ২৫০ টাকার মধ্যেই পাবেন কীটনাশকের প্যাকেট। আর এক বস্তা মাটির দাম ১০০ টাকা।

অনেকে প্লাস্টিকের টবের পরিবর্তে মাটির টব ব্যবহার করেন। ছোট মাটির টব পাওয়া যায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর বিভিন্ন নকশা করা মাটির টবের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।

গাছের ক্যালসিয়ামের জন্য হাড়ের গুঁড়া দেন অনেকে। এই হাড়ের গুঁড়া বিক্রি হয় প্যাকেটের সাইজ অনুসারে ৯০ থেকে ১৫০ টাকায়। আবার একই কাজে নারকেলের ছোবড়া বিক্রি হয় প্রতি প্যাকেট ১৫০ টাকায়।

গাছের চেয়ে এসব আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেশি বলে জানান মোহাম্মদপুর এলাকার মায়ের দোয়া গার্ডেনের মালিক জিএম সাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ছোট গাছের দাম ৫০ টাকা। টবসহ গাছের দাম পড়বে আরও ১০০ টাকা। আবার সার নিলে যোগ হবে আরও ৫০ টাকা। এর মানে হলো, ৫০ টাকার গাছে আপনার ১৫০ টাকার জিনিস লাগবে।’ তবে এখন প্রতি এলাকায় নার্সারি গড়ে ওঠায় ব্যবসা আগের তুলনায় কম বলে জানান এ তরুণ বিক্রেতা।

কোথায় পাবেন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার শহীদ পার্কের বিপরীত পাশে ১৩টি ছোট নার্সারি আছে। এসব নার্সারিতে গাছ লাগানোর সব উপকরণ ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। প্রায় এক যুগ ধরে এ এলাকায় নার্সারি ও সরঞ্জামের ব্যবসা করছেন আল-আমিন। তিনি বলেন, মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার টব বিক্রি হয়। বাগান করার অন্য জিনিস বিক্রি করে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা।

নার্সারির মালিকেরা জানান, বর্তমানে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় ছোট, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে প্রায় ৮০০ নার্সারি আছে। এর মধ্যে ছোট আকারের ৪৫০ ও মাঝারি ২৫০টি। বাকিগুলো বড় আকারের। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নার্সারি আছে প্রায় ৩০০টি। ঢাকার আগারগাঁও, ৩০০ ফুট, ১০০ ফুট, দিয়াবাড়ি, দোয়েল চত্বর, বেইলি রোড, কাকরাইল ও বেড়িবাঁধ এলাকায় অধিকাংশ নার্সারি গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু নার্সারি আছে। এ ছাড়া বিমানবন্দর এলাকার আশপাশে কয়েকটি নার্সারি আছে।

অন্যদিকে সাভার, আশুলিয়া, রূপগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায় আছে প্রায় ৫০০টি নার্সারি। এসব নার্সারিকে কেন্দ্র করে গাছ পরিচর্যার বিভিন্ন উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবসাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই খাতে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। আর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার বধ্যভূমির রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি নার্সারি রয়েছে। প্রতি সোমবার এখানে গাছের মেলা হয়। এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃক্ষপ্রেমীরা আসেন। এখানে সব জিনিসের পাশাপাশি দামও কিছুটা কম পাওয়া যায়।