পুরোনো স্যানিটারি পণ্য কিনবেন কীভাবে, দাম কত

পুরোনো স্যানিটারির দোকানে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছেছবি: প্রথম আলো

সাধ ও সামর্থ্যের ফারাক থাকলে পুরোনো জিনিসপত্রের দিকে মানুষ ঝুঁকে যায়। পোরসেলিন কিংবা সিরামিকের তৈরি স্যানিটারি পণ্য ভেঙে অথবা ফেটে যাওয়ার আগপর্যন্ত পুনর্ব্যবহার করা যায়। এ ধারণা থেকেই গত দুই দশক আগে বারিধারা এলাকায় পুরোনো স্যানিটারিসহ নানা পুরোনো পণ্যের বাজার গড়ে ওঠে।

অভিজাত এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে পুরোনো স্যানিটারি পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রি করেন এই বাজারের ২৫-৩০ জন। এসব স্যানিটারি পণ্য ২৫ থেকে ৬০ শতাংশ কম দামে পাওয়া যায়। বারিধারা জে ব্লকের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর রোডের মাঠের পাশে সারি সারি দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব পুরোনো কমোড, বেসিন ও কিচেন সিংক। দেখে বোঝার বোঝার উপায় নেই এগুলো পুরোনো ও ব্যবহৃত।

শুধু কমোড ও বেসিন নয়; পুরোনো ট্যাপ, জেট স্প্রে, মিরর ক্যাবিনেট, টাওয়েল হ্যাঙ্গার, ফ্লাশ সিস্টেমসহ নানা ধরনের বাহারি স্যানিটারি পণ্য এখানে মেলে। টোটো, আরএকে, সুইস, গ্লোরি, ভিক্টর, হিন্দওয়্যার, চারুসহ ১৫ থেকে ২০টি দেশি–বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যায়। তবে পুরোনো স্যানিটারি পণ্য কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন।

দরদাম কত

পুরোনো স্যানিটারির বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওয়েস্টার্ন কমোড, ফ্লোর মাউন্টেড, ওয়াল হ্যাঙ্গার, ব্যাক টু ওয়াল, সাধারণ স্কোয়াট প্যানের কমোড পাওয়া যায়। এসব কমোডের দাম মান ও ব্র্যান্ডভেদে সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানে মেলে পুরোনো সেন্সরযুক্ত অটোমেটিক ফ্লাশ কমোড। কয়েকটি দোকানে ১ বছর পর্যন্ত যন্ত্রাংশের ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে।

এ ছাড়া পেডেস্টাল বেসিন, হ্যাঙ্গিং বেসিন, কাউন্টার টপ বেসিনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বেসিন পাওয়া যায়। প্রকার ও মানভেদে এসব পুরোনো বেসিনের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। দেশি–বিদেশি ব্র্যান্ডের ক্যাবিনেট বেসিন মিলবে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ ছাড়া সিঙ্গেল বোল সিংক, ডাবল বোল সিংক, সিংক উইথ ড্রেইনার, আন্ডার মাউন্ট সিংক, হেলমেট সিংকসহ বিভিন্ন ধরনের কিচেন সিংক পাওয়া যায়। এসব সিংকের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ভাই ভাই স্যানিটারির স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি মাসে কোনো না কোনো ফ্ল্যাট, রেস্টুরেন্ট ও অফিস পরিবর্তিত হচ্ছে। অনেকে নতুন বাসা বা অফিস ভাড়া নিলেও পুরোনো স্যানিটারি পণ্য পরিবর্তন করে। এসব পণ্য কম দামে সংগ্রহ করি।’

পুরোনো স্যানিটারির দোকানে সাজিয়ে রাখা কমোড দেখছে এক ক্রেতা
ছবি: প্রথম আলো

ক্রেতা কারা

সীমিত খরচে বাড়ি মেরামত বা নতুন বাড়ি নির্মাণের সময় অনেকে কম দামে ভালো স্যানিটারি পণ্য খোঁজেন। আবার কেউ হয়তো রেস্তোরাঁ বা দোকান চালু করছেন, তাঁরা খরচ কমাতে কম দামে স্যানিটারি পণ্য চান। এর পাশাপাশি এই বাজার চাহিদা মেটাচ্ছে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের। পুরোনো বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেরামত করছেন, তাঁরাও নতুন দামি স্যানিটারি কিনতে চান না। তাঁদের জন্য সমাধান এই বাজার।

জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান পুরোনো ফ্ল্যাট কিনে সংস্কার করে বিক্রি করে। তাদের অনেকে বারিধারার বাজার থেকে কম দামে স্যানিটারি পণ্য কেনে।

বারিধারার স্যানিটারি পণ্যের বাজারে কথা হয় এমন এক প্রতিষ্ঠান সেলফ হোম এনার্জি প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো ফ্ল্যাট কেনার আগে বেশির ভাগ ক্রেতা তাঁদের স্যানিটারি ফিটিংস নতুন চান। তিনি এই বাজার থেকে ৫টি বেসিন ১ হাজার ৬০০ টাকা ও ৫টি কমোড ৩ হাজার ৫০০ করে কিনেছি। এখানে ৫০ শতাংশ অথবা তার কম দামে স্যানিটারি পণ্য পাওয়া যায়।’

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বেসরকারি চাকরিজীবী ইউনুস আহমেদ বনানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার অফিসের জন্য একটি বেসিন ও কমোড কিনতে এসেছি। সব ধরনের ও মানের পণ্য কম দামে পাওয়া যায়, তাই এখানে আসা।’

কিছু পরামর্শ

পুরোনো স্যানিটারি পণ্য কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত।

এক. পণ্যের অবস্থা খুঁটিয়ে দেখুন। চিপ, ফাটল, দাগ বা পানির দাগ আছে কি না, পরীক্ষা করুন। ফ্লাশ বা ট্যাপ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, দেখে নিন।

দুই. ব্র্যান্ড ও মডেল যাচাই করুন। চেষ্টা করুন ভালো মানের পরিচিত ব্র্যান্ড (যেমন টোটো, আরএকে, হিন্দওয়্যার) কিনতে।

তিন. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান দেখুন। কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কারের পর পণ্যের চেহারা নতুনের মতো হলেও ভেতরে সমস্যা থাকতে পারে।

চার. গ্যারান্টি বা রিটার্ন পলিসি আছে কি না, জিজ্ঞাসা করুন।

পাঁচ. দাম যাচাই করুন ও দরদাম করুন। একই পণ্যের দাম একাধিক দোকানে যাচাই করুন। অধিকাংশ দোকানে দরদাম সম্ভব, তাই প্রথমে বেশি দাম বললেও কমিয়ে নেওয়া যায়।

ছয়. পাইপ, নাট, বোল্টসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাচ্ছেন কি না, দেখুন।