কেন কিনবেন প্রাইজবন্ড, আছে কত পুরস্কার

প্রাইজবন্ডফাইল ছবি

১০০ টাকার বিনিময়ে ৬ লাখ টাকার স্বপ্ন—কথাটি শুনলে মনে হতে পারে কোনো লটারি কোম্পানির বিজ্ঞাপন। তবে বিষয়টি আদতে তা নয়; বরং এটি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সঞ্চয়পদ্ধতি বা প্রাইজবন্ড। প্রাইজবন্ড হলো বাংলাদেশের সরকার প্রবর্তিত একধরনের কাগুজে মুদ্রাপদ্ধতি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু করা হয়।

প্রাইজবন্ড নাম শুনলেই ভেসে ওঠে ছোট কাগজের ছবি। যে কাগজ বছরের পর বছর আলমারির ভেতর পড়ে থাকে। এমনও হয়, এই কাগজ কখনো খুলে দেখা হয় না।

কিন্তু যাঁরা মাঝেমধ্যে এই কাগজ নেড়েচেড়ে দেখেন বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ঘাঁটেন, তাঁরা জানেন, এই কাগজের মাহাত্ম্য কী। তিন মাস অন্তর প্রাইজবন্ডের যে ড্র অনুষ্ঠিত হয়, তাতে অনেকেই পুরস্কার পেয়ে যান। পুরস্কারের সংখ্যা কম নয়। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রাইজবন্ডের ড্রতে ৩ হাজার ৭৭২টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ফলে পাঠক ভাবতেই পারেন, তিন মাস অন্তর যে ড্র অনুষ্ঠিত হয়, তাতে কারও ভাগ্যে কিছু লেগে যেতে পারে।

বছরে চারবার প্রাইজবন্ডের লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এই ড্রয়ের তারিখ নির্ধারিত আছে। সেগুলো হচ্ছে—৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। ড্রর ফলাফল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই লিংকে (https://prizebond. ird. gov. bd/) প্রাইজবন্ডের নম্বর ও সিরিজ দিয়ে অনুসন্ধান করার সুযোগ আছে, অর্থাৎ আপনি পেয়েছেন কি না, তা নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারবেন। ড্রয়ের তারিখের দুই মাস আগে গ্রাহক যেসব প্রাইজবন্ড কিনবেন, সেগুলোই কেবল নিকটবর্তী লটারির ড্রতে অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যগুলো হবে না। সে কারণে যে সময় পর্যন্ত প্রাইজবন্ড কিনলে লটারিতে অংশ নেওয়া যাবে, সেই সময় পর্যন্ত বিক্রি বাড়ে। আবার লটারিতে অংশগ্রহণের সময় শেষ হয়ে গেলেই বিক্রি কমে যায়।

কেন কিনবেন প্রাইজবন্ড

প্রাইজবন্ড লটারির মতো হলেও ঠিক লটারি নয়। লটারির ক্ষেত্রে একবার ‘ড্র’ হয়ে গেলে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া টিকিটের মূল্যও থাকে না। লটারিতে জয়ী না হলে পুরো টাকাই শেষ। কিন্তু প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’ হয়ে যাওয়ার পরও মেয়াদ শেষ হয় না। পরবর্তী ‘ড্র’–এর সময়ও মেয়াদ থাকে। অর্থাৎ প্রাইজবন্ডের মেয়াদ শেষ হয় না। প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’ কয়েকবার হয়ে যাওয়ার তা ভাঙানো যায়। তবে প্রাইজবন্ডের গ্রাহক সুদ বা লভ্যাংশ পাবেন না। মূলত প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং তা কিনে সরকার সেই ঋণ পরিশোধ করে।

একসময় সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে প্রাইজবন্ডের বহুল ব্যবহার ছিল। সরাসরি নগদ অর্থ উপহার হিসেবে দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই স্বস্তিকর নয়। তেমন পরিস্থিতিতে উপহার হিসেবে প্রাইজবন্ড কার্যকর সমাধান। বিয়ের সময় উপহার হিসেবে প্রাইজবন্ড যথাযথ। নববিবাহিত দম্পতি চাইলে প্রাইজবন্ড ভাঙাতে পারেন। আবার চাইলে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করে লটারি বা ড্রতে নিজের ভাগ্য যাচাই করতে পারেন। অর্থাৎ প্রাইজবন্ড থাকলে একধরনের স্বাধীনতা থাকে। বিয়ের পাশাপাশি জন্মদিন, মুখে ভাত ও খতনার মতো উপলক্ষে প্রাইজবন্ড দেওয়া যায়।

কোথা থেকে কিনবেন ও ভাঙাবেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয় (ময়মনসিংহ ব্যতীত); শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া সব তফসিলি ব্যাংক; জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সব সঞ্চয় ব্যুরো অফিস ও ডাকঘর থেকে প্রাইজবন্ড কেনা ও ভাঙানো যায়। ক্রেতা সরাসরি এসব কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে এই বন্ড কিনতে পারেন। আবদেন করার প্রয়োজনীয়তা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো কার্যালয়ে (ময়মনসিংহ ব্যতীত) অথবা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া যেকোনো তফসিলি বা যেকোনো শাখায় অথবা যেকোনো সঞ্চয় ব্যুরো অফিস অথবা যেকোনো পোস্ট অফিসে বিজয়ী মূল বন্ডসহ নির্ধারিত (ফরম পিবি-২৩) ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে পুরস্কারের অর্থ দাবি করা যায়। পুরস্কার দাবির তারিখ থেকে সাধারণত দুই মাসের মধ্যে পুরস্কারের অর্থ পাওয়া যায়। প্রাপকের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে পুরস্কারের অর্থ জমা হয়ে যায়। এ ছাড়া এসব কার্যালয় থেকে বন্ড ভাঙানো যায়।

কতগুলো পুরস্কার

পুরস্কারের ঘোষণার সময় বলা হয়, মোট পাঁচটি পুরস্কারের জন্য প্রতিটি সিরিজ থেকে কতগুলো পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকার জন্য ড্রতে একটি নম্বর বাছাই করা হয়; কিন্তু বলে দেওয়া হয়, প্রতিটি সিরিজ থেকে একটি করে পুরস্কার দেওয়া হবে। ধরা যাক, প্রথম পুরস্কার ছয় লাখ টাকার জন্য ০২৬৪২৪৫ নম্বরটি ড্রতে নির্বাচিত হয়েছে; ৮২টি সিরিজের প্রতিটিতে এই নাম্বারের প্রাইজবন্ড আছে। ফলে প্রথম পুরস্কার পাবেন মোট ৮২ জন। একইভাবে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার দ্বিতীয় পুরস্কার পাবেন ৮২ জন; এক লাখ টাকার তৃতীয় পুরস্কার পাবেন প্রতিটি সিরিজের জন্য দুটি করে মোট ১৬৪ জন; ৫০ হাজার টাকার চতুর্থ পুরস্কার পাবেন প্রতিটি সিরিজের জন্য দুজন করে মোট ১৬৪ জন; ১০ হাজার টাকার পঞ্চম পুরস্কার পাবেন প্রতিটি সিরিজের জন্য ৪০টি করে মোট ৩ হাজার ২৮০ জন। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৭৭২টি পুরস্কার।

প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থে আয়কর আছে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ১১৮ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাইজবন্ড পুরস্কারের অর্থ থেকে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হয়।