ঘরে বসেই কাটুন বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকিট
একসময় বাংলাদেশের যেসব জেলায় রেলপথ ছিল না, টাঙ্গাইল তার অন্যতম। যমুনা সেতুর উদ্বোধনের পর এই জেলায় ট্রেনের লাইন আসে। ট্রেন চলাচলও শুরু হয়। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের জন্য টাঙ্গাইল গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী স্টেশন। কিন্তু স্টেশন শহরের এক প্রান্তে হওয়ায় একসময় টিকিট করা কঠিন ছিল। ট্রেনের আসনও কম বরাদ্দ থাকায় সাধারণ মানুষ প্রায়ই টিকিট পেতেন না; অধিকাংশ টিকিট থাকত কালোবাজারির কাছে।
২০২৩ সালে রেলওয়ের সিংহভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন রাজশাহী থেকে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট এক সপ্তাহ আগে থেকেই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে টাঙ্গাইলের ট্রেনযাত্রীরা সহজে ট্রেনের টিকিট করতে পারছেন। কালোবাজারিদের ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে।
একসময় দূরপাল্লার বাসের টিকিটের জন্য মালিবাগ, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর, গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াতে হতো। কিন্তু এখন অনলাইনে সহজেই এসি, ননএসি বাসের টিকিট পাওয়া যায়।
একসময় বাস, ট্রেন বা লঞ্চের টিকিট করতে নানা ঝামেলা পোহাতে হতো। বিশেষ করে ঈদের সময় টিকিট কেনা ছিল রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতো। রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে পরের দিনের আসন পাওয়া যায় কি না, তা নিশ্চিত করা ছিল প্রায় অসম্ভব। ফলে যাত্রার আনন্দ বিরক্তিকর অভিজ্ঞতায় পরিণত হতো।
ই-টিকিটিংয়ের কল্যাণে সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে যাত্রীরা মুক্তি পেতে শুরু করেছে। ভ্রমণ এখন সহজ, নিরাপদ ও পরিকল্পিত। ট্রেন, বাস, লঞ্চ বা বিমানের যাত্রা—সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। অনলাইন টিকিটিং দেশের যাতায়াতব্যবস্থাকে আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছে। নারী, কর্মজীবী ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।
অনলাইন টিকিটিং শুধু ট্রেনেই সীমাবদ্ধ নয়। বাস, লঞ্চ ও বিমানের টিকিটও এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। আগের সময় বড় বাস কোম্পানির কাউন্টারে ফোন করে টিকিট পাওয়া যেত না বা সময় লেগে যেত। এখন অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সহজেই টিকিট পাওয়া যায়, প্রয়োজন হলে বাতিলও করা সম্ভব। বিশেষ করে ঈদের আগে এটি দারুণ সুবিধা দিয়েছে।
কীভাবে করবেন
অনলাইন এসব প্ল্যাটফর্মে যাত্রীরা আসন দেখে টিকিট কিনতে পারেন। ধরা যাক, কেউ ট্রেনের টিকিট কাটবেন। প্রথমে ‘রেল সেবা’ অ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর স্টেশন, তারিখ ও ট্রেনের শ্রেণি নির্বাচন করা হয়। শেষ ধাপে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড বা এমএফএসের (মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা) মাধ্যমে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। পেমেন্ট সম্পন্ন হলে ই-টিকিট প্রিন্ট বা মোবাইলে সংরক্ষণ করা যায়।
বাসের ক্ষেত্রেও একই সুবিধা আছে। ‘সহজ’, ‘বিডিটিকিটস’, ‘যাত্রী’ বা ‘পরিবহনডটকমের’ মতো ওয়েবসাইট বা অ্যাপে গন্তব্য ও তারিখ নির্বাচন করে পছন্দের বাসের আসন নির্ধারণ করা যায়। তারপর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করা যায়। পেমেন্ট শেষ হলে টিকিটের সফট কপি ই–মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া যায়। ফলে ঈদের মতো সময়েও এতে লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি কমে গেছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।
বিমানের ক্ষেত্রেও অনলাইন ব্যবস্থা সমানভাবে কার্যকর। বিমান বাংলাদেশ, শেয়ার ট্রিপ, গোজায়ান বা ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে গন্তব্য, তারিখ, ফ্লাইট ও যাত্রী তথ্য দেওয়ার পর ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করা যায়। ই–মেইলে প্রাপ্ত ই-টিকিট এখন মোবাইল ফোনেই রাখা সম্ভব।
তবে ৩০০ ডলারের বেশি পরিশোধের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, টিকিটসহ যে কোনো কেনাকাটা, ফি বাবদ বাংলাদেশে বসে ৩০০ ডলারের বেশি পরিশোধ করা যায় না। তবে টাকায় পরিশোধে এমন সীমা নেই।
অনলাইনে টিকিট করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিরাপত্তা ও ঝামেলাহীন। যাত্রীরা চাইলে যেকোনো সময়ে, যেকোনো স্থান থেকে টিকিট দেখে নিতে পারেন, প্রয়োজন হলে বাতিলও করতে পারেন। নারী ও একক যাত্রীদের জন্য এটি বিশেষভাবে সহায়ক। আগের মতো কাউন্টারে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ঝক্কি আর নেই।
তবে ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট বা ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো চাহিদাসম্পন্ন রুটে আগেভাগে টিকিট করা ভালো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী রুটে প্রতি সপ্তাহান্তে এবং ছুটির দিনে প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে বেশির ভাগ টিকিট সংরক্ষিত হয়ে যায়। একসঙ্গে কোটির বেশি যাত্রীকে সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা এসব কোম্পানির আছে; কিন্তু অনেক সময় সিস্টেমে চাপ পড়ে। ফলে কিছু যাত্রী টিকিট পান না। তবে নিয়মিত সিস্টেমের আপগ্রেড বা মানোন্নয়ন করা হয়।