কর কার্ড পেল ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

সেরা করদাতাদের কর কার্ড ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। গতকাল সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

দেশের ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সেরা করদাতা হিসেবে কর কার্ড ও সম্মাননা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেরাদের মধ্যে ব্যক্তি ৭৬ জন আর কোম্পানি ৫৩টি। অন্যান্য শ্রেণিতে আরও ১২ করদাতা পেয়েছে সেরা করদাতা পুরস্কার। এ ছাড়া সারা দেশে জেলাভিত্তিক ৫২৪ জন সর্বোচ্চ ও দীর্ঘ সময়ের আয়করদাতাকেও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে ১৪১ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

এনবিআর ২০১০ সাল থেকে কর কার্ড এবং ২০০৮ সাল থেকে জেলাভিত্তিক সর্বোচ্চ ও দীর্ঘ সময়ের আয়করদাতাদের পুরস্কার দিচ্ছে। এবারে সেরা ১৪১ কোম্পানি ও ব্যক্তির মধ্যে ৫ জন করে ১০ জনের হাতে সম্মাননা স্মারক ও কর কার্ড তুলে দেওয়া হয়। বিরাজমান কোভিড-১৯-এর কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে একই জায়গায় জনসমাগম পরিহারের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠান অনাড়ম্বরভাবে করা হয়।

গতকাল কর কার্ড ও সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করা পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো গ্রামীণফোন, আকিজ গ্রুপ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইউনিলিভার লিমিটেড। ব্যক্তি পর্যায়ের পাঁচজন হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, হাজী মো. কাউছ মিয়া এবং একই পরিবারের তিনজন রুবাইয়া ফারজানা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন ও লায়লা হোসেন।

বাকি ১৩১ কর কার্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকেই ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে করোনায় মারা যাওয়া এনবিআরের আট কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের হাতে সমবেদনা স্মারক তুলে দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথমেই সেরা করদাতাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, করদাতাদের কর দিয়েই পদ্মা সেতু করা হয়েছে। অনেক বৃহৎ প্রকল্পের কাজও চলমান। এত কিছু করার সাহস আসে করদাতাদের কাছ থেকে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষ কর দিতে চান। মানুষের মধ্যে কর নিয়ে অনেক ভয়ভীতি ছিল, যা অনেকটা দূর হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর সংগ্রহের অনুপাত কম বলে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়। হিসাবটি যথাযথ নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক আয় দেখানো হয় না। এগুলো শুধু এক হাত থেকে অন্য হাতে যাওয়া। দুই বছর আগে এনবিআরকে বিষয়টি ঠিক করতে বলা হয়েছিল। এটা ঠিক, কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হওয়া উচিত। কর ব্যবস্থাপনায় কাগজ-কলমের পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় গেলে কর সংগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে কর-জিডিপির হার বাড়ানো দরকার। সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে।

সেরা করদাতা যাঁরা

ব্যক্তি পর্যায়ে কর কার্ড দেওয়া হয়েছে পাঁচ শ্রেণিতে। এগুলো হচ্ছে সিনিয়র সিটিজেন, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী ও তরুণ। আর আয়ের উৎস বা পেশার শ্রেণি ১৩টি—ব্যবসায়ী, বেতনভোগী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, হিসাববিদ, নতুন করদাতা, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী ও অন্যান্য।

এবারে সিনিয়র সিটিজেন শ্রেণিতে সেরা করদাতা হয়েছেন গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান (বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী) গোলাম দস্তগীর গাজী। এ ছাড়া ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, উত্তরা মটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ও ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলীহুসেইন আকবরআলী সেরা করদাতা হয়েছেন।

মহিলা শ্রেণিতে সেরা করদাতা হয়েছেন ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের লায়লা হোসেন ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান।

খেলোয়াড় শ্রেণিতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল খান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা সেরা করদাতা কার্ড পেয়েছেন। অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে শাকিব খান, বিদ্যা সিনহা মিম ও রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং শিল্পী শ্রেণিতে তাহসান রহমান, মমতাজ বেগম ও শাহীন সামাদ।

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া শ্রেণিতে সেরা করদাতা কার্ড পেয়েছে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগী মিডিয়াস্টার লিমিটেড ও ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড। একই শ্রেণিতে ট্রান্সকম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠান মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেডও কর কার্ড পেয়েছে।