ছাড় দেখলেই ঝাঁপ দেবেন না কেনাকাটায়

প্রতিদিনই অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে নানা দোকানে ঢুঁ মারেন সোমা। প্রয়োজন না থাকলেও নানা কিছু কেনেন। সংসারের টুকিটাকি জিনিস থেকে শুরু করে পোশাক, বাচ্চার খেলনা—সবই কেনেন তিনি। এর মধ্যে কোনো দোকানে ছাড় দেখলে অযথাই গাদাখানেক পোশাক কিনে ফেলেন। আলমারিতে জায়গা দিতে হিমশিম অবস্থা। সর্বোপরি মাস শেষে দেখেন আয়–ব্যয়ের হিসাব মেলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এত কষ্ট করে চাকরি করছেন, আগামী দিনের জন্য জমছে না কিছুই।

কেবল সোমা নয়, এমন অযথা কেনাকাটা করা স্বভাব আছে আমাদের অনেকের মধ্যে। দেখা যায়, অবসর পেলেই দোকানে দোকানে ঘোরা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও ‘উইন্ডো শপিংয়ের’ তালে কেনা হয়ে যায় অনেক কিছু। ছাড় দেখলে পকেট থেকে চলে যায় অনেকগুলো টাকা। এই অযথা কেনাকাটার অভ্যাস বন্ধ করার বেশ কিছু তরিকা আছে। সেগুলো মেনে মনকে বোঝালে কাজে আসতেও পারে।

ভাবুন কী প্রয়োজন

মজার বিষয় হচ্ছে, অনেক মানুষ শুধু শুধু কেনাকাটা করেন, কারণ, তাঁদের কাছে এত বেশি পরিমাণ রয়েছে যে তাঁরা কেনার সময় আগের জিনিসগুলোর কথা ভুলে যান। শুধু কাপড়চোপড় বা আনুষঙ্গিক জিনিসের ক্ষেত্রে এমনটা হয়, তা নয়, গৃহস্থালির জিনিস, ছোট যন্ত্রপাতি—এসবের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। একটা উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ঘরের জন্য কাঁচি লাগবে ভাবতে ভাবতে আট ধরনের কাঁচি কিনে ফেলেন আনিলা। পরে হঠাৎ আলমারির ড্রয়ারে দেখেন আগে দুটো কাঁচি কেনা রয়েছে, যার কথা তিনি ভুলেই গেছেন।

তাই আসলে কেনাকাটার আগে ভালো করে একটু সময় নিয়ে ভাবা উচিত। হুট করে কিনে ফেলা উচিত নয়। চোখের নেশায় কিনবেন না। কোনো কিছু কেনার আগে এটি আপনি কেন কিনবেন, এটি কি আপনার লাগবে, জিনিসটা ছাড়া চললে আপনার কোনো সমস্যা হবে কি না—ছোট্ট করে মনের মধ্যে এমন হিসাব কষে নিলে অযথা কেনাকাটা কমই হবে।

ভালো মানের পণ্য কিনুন এবং ব্যবহার করুন

প্রায়ই দেখা যায়, সামনে যা কম দামে পাওয়া যায়, তা প্রয়োজন না পড়লেও কিনে রাখা হয়। কোনো দোকানে গিয়ে দেখা গেল জামার দাম কম, কিনে ফেলা হলো। অথচ বাড়িতে এনে পরাও হলো না। আবার এমনও হয়, হুট করে সামনে যা পেলাম, কিনলাম, মান ভালো না, ফেলে দিলাম। তাই ভালো মানের পণ্য বুঝে কিনে সেটা ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

কৃতজ্ঞ হন

মনে মনে ভাবতে পারেন, আমি তো এটা কিনতে পারছি, কত মানুষ তো পারে না। অযথা ব্যয় করছি অথচ কত মানুষের একটা প্রয়োজন মেটাতে কষ্ট করতে হয়। জীবনের প্রতি এই কৃতজ্ঞতাবোধ আপনাকে অযথা ব্যয় করা থেকে বিরত রাখবে।

প্রলোভন এড়িয়ে চলুন

দোকানে ঘুরছেন, দেখলেন, একটার সঙ্গে একটা ফ্রি—এমন অফার, কিনে ফেললেন অসংখ্য জিনিস, এই প্রলোভন দূর করুন। পছন্দের দোকানে ছাড় দিচ্ছে, কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। ছোট একটা উদাহরণ দিই। শামীম নামের এক ব্যক্তি জানান, পছন্দের দোকানে ছাড় দেখলে মাপ ঠিক না হলেও পোশাক কিনে ফেলেন তিনি। জানালেন, এত কমে দিচ্ছে দেখে রেখে আসতে মন চায় না তাঁর। আবার দেখা যায়, বন্ধুর ঘড়ি দেখলেন, নিজের আছে, তারপরও কিনে ফেললেন। এই মানসিকতা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

ভাগ করে নিতে শিখুন

দেখা যায়, পরিবারের সবার আলাদা আলাদা জিনিস। এই করতে গিয়ে কেনা হচ্ছে অনেক কিছু। ভাইবোনদের মধ্যে জিনিস ভাগ করে নেওয়ার প্রবণতা সংসারের খরচ কমায়।

ঘরে জায়গা আছে কি না

কিছু কেনার আগে দেখবেন সেটি রাখার জায়গা আছে কি না ঘরে। মন চাইল কিনলেন, পরে স্তূপ করে রাখলেন। আসবাব কেনার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, সেটা ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে, নাকি ভাগাড় বানিয়ে দেবে। ভাবুন, খুব ভাবুন, ভেবে সঠিকভাবে কেনাকাটা করুন।

ওপরের এত আলোচনায় প্রশ্ন আসতে পারে, কেন অযথা কেনাকাটা বন্ধ করব। খুব সাধারণ উত্তর। কেনাকাটার নেশায় দেখা যায় প্রয়োজনের সময় হাতে অর্থ নেই, সঞ্চয় নেই। অবশ্যই জীবনের শখ মেটানোর প্রয়োজন আছে, সেই সঙ্গে আগামী দিনের কথাও ভাবা উচিত।

সূত্র: মানি ডট কম।