নতুন অর্থবছর শুরু, এখনই রিটার্ন দিতে পারবেন

নভেম্বর মাসে গিয়ে আপনি রিটার্ন দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন। এই অফিস, ওই অফিসে দৌড়াদৌড়ি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এত তাড়াহুড়োর কী দরকার? আপনি চাইলে এখনই আপনার বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে পারবেন। প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে যেকোনো করদাতা চাইলে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। কারণ, আগের বছরের জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত আয়ের হিসাব করে বার্ষিক রিটার্ন দিতে হয়। তাই ঝক্কি-ঝামেলায় যেতে না চাইলে এখনই বার্ষিক রিটার্ন দিয়ে দিন। নিশ্চিন্তে থাকুন।

বাংলাদেশে প্রায় ৬২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। শুধু জমি বেচাকেনা কিংবা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য যাঁরা টিআইএন নিয়েছেন, তাঁরা বাদে বাকি সবাইকে রিটার্ন দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ২৫ লাখের মতো টিআইএনধারী বার্ষিক রিটার্ন দিয়ে থাকেন।

এবার আসি কোথায় রিটার্ন দেবেন। প্রত্যেক করদাতাকে একটি কর অঞ্চলের অধীনে টিআইএন দেওয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট কর অঞ্চলের করদাতাদের একাধিক সার্কেলে অধিভুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। চার বছর পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া যাবে না। তাই কর অফিসে গিয়েই রিটার্ন দিতে হবে।

যে পরিবর্তন মনে রাখবেন

প্রতিবছরই রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। প্রথমে মনে রাখতে হবে, এবারও করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নারী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী করদাতাদের সাড়ে চার লাখ টাকা, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের বার্ষিক আয়ের পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কর নেই।

প্রতিবন্ধী সন্তানের মাতা–পিতা বা আইনগত অভিভাবকের আয়ে করমুক্তসীমায় আরও ৫০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। তবে এবারের বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাদের করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
টিআইএন ছাড়া দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। তাই দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনবেন যাঁরা, তাঁদের রিটার্ন দিতে হবে। বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে টিআইএন লাগবে। তাই যাঁরা বাড়ি করবেন, তাঁদের রিটার্ন দিতে হবে। মনে রাখবেন, চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) যাঁরা সঞ্চয়পত্র কিনবেন বা বাড়ির নকশা করবেন, তাঁরা আগামী বছর রিটার্ন দেবেন।

একজন করদাতা এত দিন আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কিংবা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারতেন। এই সীমা কমিয়ে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। এটি খেয়াল রাখবেন। ধনীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সারচার্জের বিধানটি বাতিল করা হয়েছে। তাই ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে আয়ের ৩৫ শতাংশ সারচার্জ হিসেবে দিতে হবে।

যাঁদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক

১০ ধরনের পেশাজীবীর জন্য আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই তালিকায় আছেন চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, ব্যয় ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষ হিসাববিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, জরিপকারী, আয়কর পেশাজীবী এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীয় সরকারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার। দুই বছর ধরে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সব বেসরকারি চাকরিজীবীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

রিটার্ন দিতে যা লাগে

রিটার্ন জমার সময় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌর করের রশিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনী সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রশিদ, মূলধনী ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।

কর রেয়াত নিতে চাইলে জীবন বিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রশিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহিবলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ- এসব দেখাতে হবে।