পাঁচ মাসেই পুরো বছরের বিক্রি

চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম পাঁচ মাসেই বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র
প্রতীকী ছবি

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জুলাই-নভেম্বর) সরকার সংগ্রহ করে ফেলেছে ১৯ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার ৯৫ দশমিক ২২ শতাংশই অর্জিত হয়ে গেছে পাঁচ মাসে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সাধারণত সঞ্চয়পত্র যাঁরা কেনেন, তাঁরা এটাকে বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন। কিন্তু সঞ্চয় অধিদপ্তর যে নিট বিক্রি দেখায়, সেটি হচ্ছে আসলে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া সরকারের ঋণ। এই ঋণের বিপরীতে সরকারকে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়। এভাবে সঞ্চয়পত্র করে নেওয়া ঋণের জন্য সরকার ১০ বছরে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি সুদ দিয়েছে।

সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। একক কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে খাটাতে পারেন। অথবা যৌথ নামে খাটানো যায় এক কোটি টাকা পর্যন্ত। পেনশনধারীরা একক নামে ৫০ লাখের পাশাপাশি যৌথ নামে কিনতে পারেন আরও ১ কোটি, অর্থাৎ মোট দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া মুনাফার ওপর সরকার ১০ শতাংশ করে কর কেটে নেয়। সব সঞ্চয়পত্রের সুদই ১১ শতাংশের বেশি।

জানতে চাইলে সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যাতে নির্বিঘ্নে সঞ্চয়পত্র কিনতে ও ভাঙাতে পারেন, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করে করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়েও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন।’

সঞ্চয় অধিদপ্তরের দুই অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে পাঁচ মাসে বিক্রি বেড়েছে ১৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছিল ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।

পাঁচ মাসের প্রবণতা দেখে সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, চলতি অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো, যা গত অর্থবছরে ছিল সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ১ জুলাই চালু হয় অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ওই অর্থবছর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। যেমন সঞ্চয়পত্র কেনার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। এ কারণে গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্র কম বিক্রি হয়েছিল।

দেখা যায়, এবার পাঁচ মাসে মোট জমা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে মূল পরিশোধ হয়েছে ২৭ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা, আর মুনাফা পরিশোধ হয় ১৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয় ব্যুরো ও ডাকঘরে যে পরিমাণ জমা হয়েছে, তা থেকে মূল পরিশোধ হয়েছে বেশি। ফলে এ দুই জায়গা থেকে নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়েছে। বলতে গেলে নিট বিক্রির পুরোটাই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে।

শুধু নভেম্বর মাসকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, এ মাসে ৩ হাজার ৪০২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তার আগের বছরের নভেম্বরে বিক্রি হয়েছিল ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। আর ২০১৮ সালের নভেম্বরে নিট বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।

এ নিয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুদের হার বিবেচনায় সঞ্চয়পত্র এখন বিনিয়োগের জন্য অনেক আকর্ষণীয় ক্ষেত্র। দেড় বছর আগে থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপ না হলে পাঁচ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে ফেলত।

শিগগিরই ভারত, পাকিস্তানসহ পুরো বিশ্বের মতো সঞ্চয়পত্রের নির্দিষ্ট সুদহারের পরিবর্তে বাজারভিত্তিক সুদের দিকে সরকারের এগোনো উচিত বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।