বিমা করলে কী হয়

প্রতীকী ছবি

দেশে কেউ বিমার কথা বললে মানুষ নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকায়, ভাবখানা এমন, সেই ব্যক্তি যেন তাঁর ক্ষতি করতে এসেছেন। বিমাসম্পর্কিত এমন নেতিবাচক মনোভাব একেবারে ভিত্তিহীন নয়। কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে বিমার উপকারিতার দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক:

ঘটনা ১: উম্মে জারা দিনা প্রাণঘাতী ক্যানসার বা কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে সবাইকে ছেড়ে চলে যান ২০১৩ সালে। কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেও তাঁর জীবন খুব একটা সুখকর ছিল না। ২০১১ সালে হঠাৎ করেই বাবা মারা যায় তাঁর, একমাত্র ভাই জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী, ফলে মা ও তাঁকেই সব নির্বাহ করতে হতো। এর মধ্যে একদিন বিশেষ কিছু চিন্তা না করেই বিমা করেন তিনি। সেই বিমাই পরবর্তী সময়ে তাঁর চিকিৎসা এবং মায়ের ভরণপোষণের অবলম্বন হয়ে ওঠে। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর পর সব মিলিয়ে বিমা কোম্পানি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে, যদিও তিনি প্রিমিয়াম দিয়েছিলেন ৩৬ হাজার টাকা। চিকিৎসা বাবদ যে ব্যয় হয়, তার একটি অংশ আত্মীয়স্বজন নির্বাহ করে। বিমার টাকা থেকেও একটি অংশ ব্যয় হয়। আর দিনার মৃত্যুর পর তাঁর মা বাকি টাকাসহ পারিবারিক সঞ্চয় আরও যা কিছু ছিল, তা নিয়ে গ্রামে চলে যান। পৈতৃক বাড়িতে এক টুকরো জমি পেয়েছেন তিনি। ওই টাকা দিয়ে সেখানে ঘর তুলে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন।

তবে বহুজাতিকসহ দেশীয় বড় কোম্পানির এমন কিছু বিমা পলিসি আছে, যাতে মানুষের অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে, যেমন শিক্ষাবিমা, পেনশনবিমা এবং মূল বিমা পলিসির সঙ্গে দুর্ঘটনা বা হাসপাতাল বিমা ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গোষ্ঠী ও স্বাস্থ্যবিমা।

ঘটনা ২: ঢাকা মহানগরে যাঁরা ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, তাঁদের অনেকের হাতেও বিশেষ সঞ্চয় থাকে না। ফ্ল্যাটের ঋণের কিস্তি আর ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানের পড়াশোনার খরচ নির্বাহ করতেই সব শেষ। ফলে বড় কোনো অসুখ হলে অকূলপাথারে পড়ার মতো অবস্থা হয়। ঠিক এমনই হয়েছিল উজ্জ্বল আহমেদ নামের এক মাঝারি ব্যবসায়ীর। ফ্ল্যাট কেনার পর হাতে সঞ্চয় বলতে কিছু ছিল না। হার্ট অ্যাটাকের কিছুদিন আগেই বহুমূত্র রোগ শনাক্ত হয় তাঁর। তিনি তার কিছুদিন আগে এক বিমা প্রতিনিধির কথায় আশ্বস্ত হয়ে বিমা করেন। ফলে হার্ট অ্যাটাকের পর গুরুতর বিমার (অতিরিক্ত কাভারেজ) আওতায় লাখ পাঁচেক টাকা পান। এই টাকায় তাঁর চিকিৎসার খরচ মোটামুটি উঠে যায়। ফলে তাঁর পরিবারকে আর বিশেষ কারও কাছে হাত পাততে হয়নি। মধ্যবিত্তের এই সুরক্ষাহীনতার ব্যাপারটা সমাজে বা গণমাধ্যমে তেমন একটা আলোচিত হয় না। অথচ এ ক্ষেত্রে ভালো সমাধান হতে পারে বিমা পলিসি।

বিমার ওপর আস্থাহীনতার সঙ্গে আরেকটি বড় সমস্যা হলো, সময়মতো সেবা না পাওয়া। সব কোম্পানির কাছ থেকে সময়মতো সেবা পাওয়া যাবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

তবে বহুজাতিকসহ দেশীয় বড় কোম্পানির এমন কিছু বিমা পলিসি আছে, যাতে মানুষের অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে, যেমন শিক্ষাবিমা, পেনশনবিমা এবং মূল বিমা পলিসির সঙ্গে দুর্ঘটনা বা হাসপাতাল বিমা ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গোষ্ঠী ও স্বাস্থ্যবিমা। এতে অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার সময় বিমাসুবিধা পাওয়া যায়। আবার মূল বিমা পলিসির সঙ্গে অনেক কোম্পানি কার্ড দিয়ে থাকে, যেটা দেখালে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছাড় পাওয়া যায়।

আর আলাদা করে পেনশন বিমার কথা বলা যায়, বেসরকারি খাতে যেখানে পেনশনের ব্যবস্থা নেই, সেখানে বিমা কোম্পানির পেনশন পরিকল্প বিশেষ সহায়ক হতে পারে, যদিও বিমা কোম্পানিগুলো এ নিয়ে বিশেষ প্রচারণা চালায় না।

উল্লেখ্য, বিমা পলিসি অনেকটা ব্যাংকের ডিপিএসের মতো করে চালাতে হয়, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রিমিয়াম জমা দিতে হয়। মনে রাখতে হবে, সঞ্চয়পত্রের মতো উচ্চ হারে মুনাফা এতে মিলবে না, কারণ এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপত্তা—মৃত্যুর পর বা অসুস্থতার সময় নিরাপত্তা। তবে সমস্যা না হলে মেয়াদ শেষে কিছু মুনাফাও মেলে—কোনো পলিসিতে সেই টাকা মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় আর কোনো কোনো পলিসি চলাকালে নির্দিষ্ট মেয়াদ পরপর পাওয়া যায়। গ্রাহককে বুঝে নিতে হবে, কোনটা তাঁর দরকার।

এই খাতসংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলেন, বিমার ওপর আস্থা সৃষ্টিতে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারকেও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।