সঞ্চয়পত্র কেনার সীমাহীন সুযোগ পাচ্ছে কারা

শুধু অটিস্টিকদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো এ সুযোগ পাবে। দেশে প্রথমবারের মতো এমন সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এর অপব্যবহারের আশঙ্কাও রয়েছে।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের জন্য গড়ে উঠেছে, এখন থেকে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে। এত দিন কোনো প্রতিষ্ঠান এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারত না। সে হিসেবে অটিস্টিকদের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোই প্রথম সুযোগ পাচ্ছে।

সুযোগটি তৈরি করতে বিদ্যমান সঞ্চয়পত্র বিধি, ১৯৭৭ (সংশোধিত ২০১৫) সংশোধন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। আইআরডি এই সংশোধনের কথা জানিয়ে গত ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

শুধু অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেসব প্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের সহায়তায় কাজ করে, তারাও এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৫০ লাখ বা যৌথ নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ থাকলেও অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগের কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।

আইআরডি সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানই এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে যাবে, তার আগে সে প্রতিষ্ঠানকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।

দেশে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র চালু হয় ১৯৯৮ সালে। মেয়াদ শেষে এর মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ব্যক্তিপর্যায়ে এ সঞ্চয়পত্র দেশের যে কেউই কিনতে পারেন।

বিধি সংশোধনের কারণ জানার জন্য আইআরডি সচিবকে গত রোববার ফোনে না পেয়ে মোবাইলে খুদে বার্তা (এসএমএস) দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি।

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আইআরডির অধীনে থাকা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের একটি সেবা পণ্য। অথচ প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার চার দিনের মাথায়ও দপ্তরটি তা ওয়েবসাইটে আপলোড করেনি।

বিধি সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে সঞ্চয় মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, অটিস্টিকদের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারবে, এ নিয়ে সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রত্যয়ন থাকা উচিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সামছুন্নাহার বলেন, ‘আমরা এখনো সে রকম ভাবিনি। আশা করছি জটিলতা হবে না।’ তিনি জানান, প্রজ্ঞাপনটি তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।

তবে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দেখা গেছে, ওয়েবসাইটে সেটি এখনো আপলোড করা হয় নি।

অটিস্টিকদের জন্য দেশে কতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা এককভাবে কোনো মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকেই পাওয়া যায়নি। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত ৪৮টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৭টি ইনক্লুসিভ বিদ্যালয় এবং বেসরকারি সংস্থা প্রয়াস পরিচালিত একটি অটিস্টিক শিশুদের বিদ্যালয়।

অটিস্টিকদের জন্য কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে? জানতে চাইলে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান গত রোববার বলেন, তিনি নতুন দায়িত্বে এসেছেন বলে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১৮ লাখ প্রতিবন্ধীর জন্য মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার জন্য ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অনেক বছর ধরে অটিস্টিকদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা পিএফডিএ ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার। সঞ্চয়পত্র বিধি সংশোধনটিকে কীভাবে দেখছেন? এ ব্যাপারে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডেনি রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অটিস্টিক বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে এটা করা হয়নি। করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থে। যেহেতু দেশের আনাচকানাচে অটিজম নাম নিয়ে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, তাই এর অপব্যবহার হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি।’