সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত বা ডিপিএস নিয়ে যত জটিলতা

আয়কর ফাইলে যদি সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত, ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) ও আমানতের সঠিক বিবরণ না থাকে, তবে কিন্তু বিপত্তি। সঠিকভাবে হিসাবভুক্ত না হলে খেসারত দিতে হয়। গুনতে হয় অতিরিক্ত আয়কর। এমনকি জেল বা জরিমানাও হতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, একাধিক ব্যাংক হিসাব আছে, কিন্তু আয়কর ফাইলে সব তথ্য না দিয়েই আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে দেয়। আবার প্রদর্শন করা ব্যাংকের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আয়কর ফাইলে যে আয় দেখানো আছে, তার থেকে ব্যাংক লেনদেন বেশি। অর্থাৎ, আয়কর রিটার্নের সঙ্গে মিল নেই, এ রকম একাধিক লেনদেন থাকে।

মনে রাখা দরকার, জমা দেওয়ার পর আয়কর রিটার্ন কিন্তু বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করা হয়। যেমন:
১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রতিবছর কিছু ফাইল অডিট করা হয়।
২. কিছু ফাইল যুগ্ম কর বা অতিরিক্ত কর কমিশনার দ্বারা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাকে আয়করের ভাষায় অর্থোডক্স বলা হয়।
৩. কর পরিদর্শন বিভাগ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল কর্তৃক কিছু ফাইল পর্যালোচনা করা হয়।
৪. উপকর কমিশনার (ডিসিটি) যেকোনো সময় যুগ্ম কর কমিশনার বা অতিরিক্ত কর কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে ৯৩ ধারায় ফাইল পুনরায় উন্মোচন করতে পারেন। আয়কর আইনে ৬ বছর পর্যন্ত আয়কর ফাইল পুনরায় উন্মোচন করা যায়।
৫. আয়কর অফিস বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক হিসাব সার্চ করে তথ্য বের করে।
৬. কোনো কারণে আয়কর ফাইলে কোনো সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, মেয়াদি সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক হিসাব বাদ পড়লে এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে এ বছর প্রদর্শন করা যাবে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম
আরও পড়ুন

সঞ্চয়পত্র

১. যে অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, সেই বছরে নির্দিষ্ট হারে বিনিয়োগ রেয়াত নিতে হবে। কেবল সংশ্লিষ্ট বছরেই আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে। অন্য কোনো বছরে রেয়াত পাওয়া যাবে না।
২. সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদ চূড়ান্ত কর দায় অর্থাৎ, সঞ্চয়পত্র থেকে যে সুদ পাওয়া যায় এবং যে পরিমাণ টাকা উৎসে আয়কর হিসেবে কেটে রাখা হয়, সেটাই চূড়ান্ত কর দায়। যেমন মনে করি, জনাব জাফরের সঞ্চয়পত্র থেকে ৫ লাখ টাকা সুদ পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ উৎসে আয়কর হিসেবে ২৫ হাজার টাকা কেটে রেখে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। সুতরাং, ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ লাখ টাকার আয়ের ওপর আর কোনো আয়কর প্রদান করতে হবে না।
৩. সঞ্চয়পত্র কেনার ফটোকপি আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়।
৪. সঞ্চয়পত্র ভাঙানো, প্রাপ্ত সুদ এবং উৎসে আয়কর কেটে রাখার প্রমাণপত্র বা সার্টিফিকেট রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

স্থায়ী ও মেয়াদি আমানত

আয়কর ফাইলে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু মিশ্র ধারণা আছে। অনেকেই বিনিয়োগ হিসেবে এফডিআরকে বিবেচনা করেন। আবার সম্পদ বিবরণীতে দেখালেও প্রতিবছরের সুদ বা মুনাফা হিসাবভুক্ত করেন না। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবের বিবরণীর মতো এফডিআরের বিবরণী তুলতে হবে।
১. যে বছর স্থায়ী আমানত বা এফডিআর খোলা হবে, সে বছরই সম্পদ বিবরণীতে দেখাতে হবে।
২. কিছু কিছু এফডিআরে প্রতিবছর সুদ বা মুনাফা উত্তোলন করা যায়। এই সুদ বা মুনাফা আয়কর ফাইলে অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে।
৩. কিছু এফডিআরে মেয়াদ শেষে সুদ প্রদান করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সঠিক তথ্য আনতে হবে। মেয়াদ শেষে মুনাফা প্রদান করলে যে বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, সংশ্লিষ্ট কর বছরে এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেট গ্রহণ করে তা আয়কর ফাইলে যথাযথভাবে দেখাতে হবে।

ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস)

মাসিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখাকেই ডিপিএস বলে। কিছু ব্যাংক মাসিক, ত্রৈমাসিক বা ছয় মাসিক অন্তর অথবা বাৎসরিক সুদ দিয়ে থাকে। কিছু ব্যাংক সুদ বা মুনাফার ওপর উৎসে আয়কর কেটে রাখে, আবার কিছু ব্যাংক প্রতিবছর সুদ বা মুনাফা প্রদান করে কিন্তু উৎসে আয়কর কেটে না রাখে মেয়াদ শেষে ভাঙানোর সময় উৎসে আয়কর কেটে রাখে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে:
১. বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যাবে।
২. যদি প্রতিবছর মুনাফা বা সুদের ওপর উৎসে আয়কর কেটে রাখে, তাহলে মোট (গ্রস) সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎসে আয় হিসাবে দেখাতে হবে এবং বছর শেষে স্থিতি সম্পদ বিবরণীতে দেখাতে হবে।
৩. মুনাফা ব্যাংক বিবরণীতে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু উৎসে আয়কর কেটে রাখছে না। এ ক্ষেত্রে শুধু সম্পদ বিবরণীতে যে পরিমাণ টাকা জমা দেখানো হচ্ছে, সে পরিমাণ টাকা সম্পদ বিবরণীতে আগের বছর জমা দেখানো থাকলে তার সঙ্গে যোগ করে এবার দেখাতে হবে। যে বছরর মেয়াদপূর্তি বা ভাঙানো হবে, সে বছর পুঞ্জীভূত মুনাফা অন্যান্য উৎসের আয় হিসাবে দেখাতে হবে।
৪. প্রতিবছরের ব্যাংক বিবরণী নিতে হবে এবং ভাঙানোর সময় সার্টিফিকেট নিতে ভুল করা যাবে না।

ব্যাংক হিসাব

ব্যাংকে যে লেনদেন হবে, তা অবশ্যই আপনার আয়কর ফাইলে প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অন্য কোনো প্রকার লেনদেন হলে তার যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। মোট বা গ্রস ব্যাংক সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎস খাতে আয় হিসাবে দেখাতে হবে এবং উৎসে কর আপনার প্রদেয় করের সঙ্গে সমন্বয় হবে।