বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে ১৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিল ডেনমার্কের দুই কোম্পানি

ডেনমার্কের দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে ‘অফশোর উইন্ড এনার্জি’ শীর্ষক বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ১৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে)। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা হবে ৫০০ মেগাওয়াট।

বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান দুটি হলো যথাক্রমে কোপেনহেগেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনারস (সিআইপি) ও কোপেনহেগেন অফশোর পার্টনারস (সিওপি)। বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সিআইপি ও সিওপি নেতৃস্থানীয় গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগ ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। তারা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ অনুযায়ী এ দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে চায়।

কোপেনহেগেন অফশোর পার্টনারসের (সিওপি) নিউমার্কেটসের পরিচালক রেনেফন বুলোর দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট করপোরেশন লিমিটেড গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক বায়ুবিদ্যুৎ খাতে অগ্রগামী দেশ ডেনমার্কের এই বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশকে সবুজ রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে একটি অনন্য সুযোগ। তবে এ মুহূর্তে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা জাতীয়ভাবে একটি ব্যয়বহুল সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। সেই হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় নাগাদ দেশের জিডিপি ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্রুত খাপ খাওয়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে ক্লিন এনার্জি ও কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, যা দেশকে অস্থিতিশীল জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি–নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্য দূর করে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক গবেষণা উদ্ধৃত করে তারা বলছে, দেশের এই সবুজ রূপান্তরের জন্য বছরে ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

এ অবস্থায় সিআইপি ও সিওপির শতকোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব বাংলাদেশের বিনিয়োগ খাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যা জলবায়ু সমৃদ্ধিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলায় টেকসই ভূমিকা রাখবে।

গত জুন মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ও ডেনমার্ক পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ‘২০২২ টেকসই ও পরিবেশবান্ধব রূপরেখার দলিল’–এর অধীনে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন প্ল্যান’ অনুমোদন করে। সম্প্রতি ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈশ্বিক জলবায়ু নীতিবিষয়ক মন্ত্রী ড্যান ইয়োগেনসন ঢাকা সফর করেন। তিনি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে কাজ করতে সম্মতি দেন। এ সময় দুই পক্ষই বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ সহজতর করতে ড্যানিশ বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্রভিত্তিক ও সুনীল অর্থনীতি খাতে সহায়তার বিষয়ে ডেনমার্ক আগ্রহ প্রকাশ করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে দেওয়া সিআইপি ও সিওপির প্রস্তাবটি হবে সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ায় ও প্রথম অফশোর উইন্ড এনার্জি বা বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা প্রযুক্তি সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে নতুন শিল্প খাতের উন্মোচন করবে। প্রাথমিক গবেষণা অনুযায়ী প্রকল্পটির নির্মাণকাজের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজারো মানুষের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির প্রথম ৩০ বছর বেশ কিছু পূর্ণকালীন পদে চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিআইপি ও সিওপি এই প্রকল্পের প্রস্তাবনায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অবকাঠামো উন্নয়নকারী ও বাংলাদেশের স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (আইপিপি) সামিট গ্রুপকে কনসোর্টিয়ামে নিয়েছে।

সিআইপি
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত কোপেনহেগেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনারস (সিআইপি) বর্তমানে গ্রিনফিল্ড নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং অফশোর উইন্ড খাতে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনাধীন তহবিলগুলো মূলত অফশোর–অনশোর উইন্ড, সৌরবিদ্যুৎ, বায়োমাস ও বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন, উন্নত বায়ুবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতকেন্দ্রিক। বর্তমানে সিআইপি ১০টি তহবিল পরিচালনা করছে। তারা এখন পর্যন্ত জ্বালানি ও এ–সংক্রান্ত অবকাঠামোতে ১৯ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে।  

সিওপি
অফশোর উইন্ড প্রকল্পের উৎপত্তি, নির্মাণ ও বাস্তবায়নে বৈশ্বিক নেতৃত্বে রয়েছে কোপেনহেগেন অফশোর পার্টনারস (সিওপি)। প্রতিষ্ঠানটি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন–সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে পারদর্শী। সিওপি এখন ইউরোপ, এশিয়া প্যাসিফিক ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৭টি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতিতে কাজ করছে।