উদ্বৃত্ত থেকে ৩০০ কোটি টাকা দিতে নারাজ ইপিবি

অর্থ বিভাগ গত জুন, জুলাই ও আগস্টে ৩০০ কোটি টাকা চেয়ে তিন দফা চিঠি পাঠালেও ইপিবি সাড়া দেয়নি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তহবিলে এখন ৭০০ কোটি টাকা আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) আকারে জমা আছে এ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মতে, এ টাকা ইপিবির উদ্বৃত্ত টাকা। সে জন্য তারা গত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ইপিবিকে তিন দফা চিঠি দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলেছে।

কিন্তু ইপিবি কোনো টাকা দিতে রাজি নয়। ইপিবি জানায়, তারা নিজেরাই অর্থের সমস্যায় আছে। তাদেরও টাকা দরকার। তাই এখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা দেওয়ার বাস্তবতা নেই তাদের।

সরকার ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান’ শীর্ষক আইন পাস করে।

আইন পাসের পর বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাগুলোর কাছে গত জুন পর্যন্ত উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তহবিলের অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করার বিনিময়ে সব দপ্তরই একধরনের সুবিধা ভোগ করে থাকে। ফলে তাদের বেশির ভাগেরই প্রবণতা হচ্ছে টাকা জমা না দেওয়া। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে উদ্বৃত্ত টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর ভাষায় কোনো দপ্তরকেই কিছু বলা হয়নি। তবে প্রয়োজনে সরকার কঠোর হবে বলে জানা গেছে।

ইপিবি যে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেবে না, তা এখনো অর্থ বিভাগকে জানায়নি। সংস্থাটি তা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষকে ১৭ অক্টোবর এক চিঠিতে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান জানান, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে টাকা জমা না দেওয়া থেকে তারা অব্যাহতি চায়।

চিঠিতে ইপিবি বলেছে, ৭০০ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা থাকলেও নিজস্ব অর্থায়নে ইপিবি ভবন নির্মাণের একটি প্রকল্প চলছে। সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) অনুযায়ী এ ভবন নির্মাণে ২৮০ কোটি, দ্বিতীয় আরডিপিপি অনুযায়ী বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিসিএফইসি) বাস্তবায়নে ৫০২ কোটি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল ও পেনশনসংক্রান্ত ভর্তুকি তহবিলে ৮০ কোটি, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৮৬২ কোটি টাকা দরকার হবে।

সে বিবেচনায় ইপিবির তহবিলে ঘাটতি হতে পারে ১৬২ কোটি টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় ৩০০ কোটি টাকা দিতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একই পরিমাণ অর্থ সরকারের কাছ থেকে ধার নিতে হবে, যা যৌক্তিক নয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ইপিবির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। টিপু মুনশির সভাপতিত্বে গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগকে চিঠি লেখার জন্য ইপিবিকে নির্দেশ দেন।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা আগে একবার ৩০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দিয়েছি। এখন ইপিবির যেহেতু দুটি প্রকল্প চলমান সেহেতু রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা দেওয়া একটু কঠিন। দিলে পরে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আবার সরকার থেকে টাকা নিতে হবে।’