দুর্নীতি ব্যবসার জন্য বাধা, বাজেটে সংস্কারের পদক্ষেপ প্রয়োজন: আইবিএফবি

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ূন রশিদ বলেছেন, ‘অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে তা আমরা প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছি। দেশের অর্থনীতিতে এখন ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। ব্যবসা সহজীকরণে বাধা হয়ে আছে দুনীতি। বাজেটে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু এমন কোনো নীতিমালা আমরা বাজেটে পাইনি।’

আজ মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ে সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাজেট ২০২৪-২৫ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি মনে করেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য। তবে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সুশাসন ও যথাযথ তদারকি দরকার। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি। এ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে হবে।

বাজেটে যে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করে আইবিএফবি। সংগঠনটির সভাপতি হুমায়ূন রশিদ মূল প্রবন্ধে বলেন, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা আগের মতো সাড়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির এই হার কমিয়ে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে।

পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জন করাও চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করে আইবিএফবি। এ নিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণপ্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে চাপের মুখে রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আহরণের কার্যপদ্ধতিতে সংস্কার আনা জরুরি। সেই সঙ্গে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য করের আওতা ও অনলাইনভিত্তিক সেবা বৃদ্ধি এবং উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস বিস্তৃত করা প্রয়োজন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও সংগঠনটির উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘অর্থনীতিতে উত্তরণ না ঘটলে ২০২৬ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাব। এ জন্য এখনই সংস্কার করে অর্থনীতির উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন। আগে প্রতিবছর বাজেট বাড়ত ১২-১৩ শতাংশ, এবার যা কমে হয়েছে ৪-৫ শতাংশ। এবারের বাজেট পরোক্ষ করমুখী হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষ কর আদায়ের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। প্রত্যক্ষ কর না বাড়লে বৈষম্য কমবে না।’

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আরও বলেন, এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা আগেও ছিল। তবে এবার বলা হয়েছে, টাকা সাদা করলে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। ফলে নানারকম প্রশ্ন উঠছে। কালোটাকা থাকলে প্রশ্ন উঠবেই, এটাই স্বাভাবিক।

অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, সহসভাপতি লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।