এবার শ্রীমঙ্গলে পর্যটক কম 

ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল সোমবার পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টগুলোর মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে।

ফাইল ছবি

সাধারণত ঈদের ছুটির পরপর শ্রীমঙ্গলমুখী ট্রেন-বাসের টিকিটের জন্য পর্যটকেরা হাহাকার করে থাকেন। যাঁরা ট্রেন-বাসের টিকিট পান না, তাঁদের একটি অংশ মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেট কার ভাড়া করে আসতেন। বিশেষ করে ঈদের আগের রাতে প্রায় প্রতিটি হোটেল-রিসোর্ট ভরে উঠত পর্যটকে। কিন্তু এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের তেমন ভিড় জমেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল সোমবার পর্যন্ত হোটেল-রিসোর্টগুলোর মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। একই কারণে এখানকার রেস্তোরাঁ ও মণিপুরি কাপড়ের দোকানসহ পর্যটনকেন্দ্রিক বিভিন্ন পণ্যসেবা বিক্রেতারা অন্যান্য বছরের মতো ব্যবসা করতে পারেননি।

রমজানের কারণে টানা এক মাস বন্ধ থাকার পর ঈদে আশানুরূপ পর্যটক না পাওয়ায় আমরা সবাই বেশ হতাশ হয়েছি। ঈদ উপলক্ষে হোটেল-রিসোর্টে যে বাড়তি খরচ হয়েছে, সেটা ওঠানোও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সেলিম আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা ও মালিক, গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট 

ঈদের দিন শনিবার থেকে টানা তিন দিন শ্রীমঙ্গলের বিজিবি ক্যাম্পের নিকটবর্তী চা-বাগান, চা জাদুঘরসংলগ্ন চা ও রাবার বাগান, বধ্যভূমি একাত্তর, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ, মণিপুরিপাড়া প্রভৃতি পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে জানা যায়, এবার বাইরের পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরাই বেশি এসেছেন। স্থানীয় ও বাইরের জেলা থেকে যাঁরা ঘুরতে বেরিয়েছেন, তাঁরা কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাধবপুর লেকে বেড়াচ্ছেন। 

আলাপকালে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে সারা দেশে প্রচণ্ড দাবদাহ থাকার কারণেই মূলত পর্যটক কম এসেছেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে অনেকেই শ্রীমঙ্গলে আসেননি বা আসার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। ঈদের পরপর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখ পড়ার কারণে বিশেষ করে পারিবারিকভাবে বের হওয়া পর্যটকেরা আসেননি। ঈদের ছুটিও এবার তেমন লম্বা নয়। এ ছাড়া জিনিসপত্রের দাম ও পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়াও অনেককে ঘোরাঘুরি থেকে বিরত রেখেছে। 

শ্রীমঙ্গলের লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রমজানে এক মাস রিসোর্ট বন্ধ ছিল। কর্মচারীরা বলতে গেলে এক মাস বসেই ছিলেন। এই সময় আমরা ঈদের পর্যটকদের জন্য রিসোর্টে অনেক কিছু সংযোজন করেছি। আমাদের আশা ছিল, ঈদের পর্যটক দিয়ে সব খরচ পুষিয়ে নেব। কিন্তু এ বছর খুবই খারাপ গেছে। ঈদের আগের দিন থেকে টানা তিন দিন যেখানে হাউসফুল থাকার কথা, সেখানে মাত্র ২৫ শতাংশ রুম ভাড়া হয়েছে। অথচ প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে পুরো রিসোর্ট হাউসফুল থাকত। এবারের মতো কম রুম বুকিং এর আগে কখনো হয়নি। এই ক্ষতি পোষাতে আমাদের কষ্ট হবে।’ 

রাধানগর এলাকার চামুং রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ইকো ক্যাফের পরিচালক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে তিন দিন ধরে আমরা যে ক্রেতা পাচ্ছি, তার বেশির ভাগই স্থানীয়। পর্যটক নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছর আমাদের এখানে প্রচুর পর্যটক আসতেন। এবার শ্রীমঙ্গলে পর্যটক কম আসায় আমাদের বিক্রি কমেছে। এটা শুধু আমাদেরই নয়, সবারই কমবেশি একই সমস্যা হয়েছে।’ 

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে গতকাল বলেন, ‘সাধারণত ঈদের আগের দিন থেকে সপ্তাহব্যাপী পর্যটক শ্রীমঙ্গলসহ পুরো জেলায় ঘুরে বেড়ান। তাঁদের জন্য প্রতিটি হোটেল-রিসোর্টকে নতুন সাজে সজ্জিত করে রাখা হয়। পর্যটকদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়। বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট হাউসফুল থাকে। কিন্তু এ বছর ঈদের আগের দিন থেকে এ পর্যন্ত চার দিনে হোটেল-রিসোর্টে সব মিলিয়ে গড়ে রুম বুকিং হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।’

সেলিম আহমেদ আরও বলেন, ‘প্রতিবার ঈদ উপলক্ষে বেশি পর্যটক আসায় বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট স্টাফদের বেতনের সঙ্গে বোনাস দিত। রমজানের কারণে টানা এক মাস বন্ধ থাকার পর ঈদে আশানুরূপ পর্যটক না পাওয়ায় আমরা সবাই বেশ হতাশ হয়েছি। ঈদ উপলক্ষে হোটেল-রিসোর্টে যে বাড়তি খরচ হয়েছে, সেটা ওঠানোও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’