প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা বিশ্বে এগিয়ে থাকলেও জাপানে পিছিয়ে

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নিয়ার তথা শতকোটিপতিদের বড় অংশই প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা। অনেক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি তালিকায় এমন প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। গত মাসে তাদের প্রকাশিত ‘রিচেস্ট ইন ২০২৪’ বা ‘২০২৪ সালের সবচেয়ে ধনী’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও দেখা যায়, শীর্ষ ২০ বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির মধ্যে ৯ জনই হলেন প্রযুক্তি খাতের। এটি একরকম বৈশ্বিক প্রবণতা হলেও ব্যতিক্রম শুধু জাপান।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি জাপানে শীর্ষ ১০ বিলিয়নিয়ারের মধ্যে মাত্র ১ জন, আর শীর্ষ ২০ বিলিয়নিয়ারের মধ্যে ২ জন প্রযুক্তি খাতের। আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, শীর্ষ ৫০–এ প্রযুক্তি খাত থেকে মাত্র ৬ ব্যক্তি ও পরিবার স্থান পেয়েছে।

সাধারণত জাপানের অর্থনীতি নিয়ে কথা উঠলে প্রথমেই গাড়ি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তি খাতের উন্নততর চিত্রই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এ ক্ষেত্রে টয়োটা, সনি, মিতসুবিশি, হোন্ডা, নিশান, ইয়ামাহা, নিতেন্দো, সফটব্যাংক, হিটাচি, প্যানাসনিক—এগুলোই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও জনপ্রিয় জাপানি কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত। অথচ ফোর্বসের মিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির তালিকায় কিনা জাপানি ফ্যাশন ও রিটেইলার তথা খুচরা বিক্রেতাদেরই জয়জয়কার। তালিকার শীর্ষ ১০–এ ৫টি, সেরা ২০–এ ৯টি আর ৫০–এর মধ্যে ১৪টি স্থানই ফ্যাশন ও রিটেইলারদের দখলে।

তাদাশি ইয়ানাই

৩৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ নিয়ে ফ্যাশন ও রিটেইলার ব্যবসায়ী তাদাশি ইয়ানাই অ্যান্ড ফ্যামিলি এখন জাপানের শীর্ষ বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি। এটি পোশাকের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ইউনিক্লোর মূল প্রতিষ্ঠান।

ফ্যাশন ও রিটেইলার বা খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে তাকাহিশা তাকাহারা ৭৫০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে পঞ্চম, ৪৭০ কোটি ডলার সম্পদ নিয়ে ইতো সিবলিংস (সেভেন অ্যান্ড আই হোল্ডিংসের প্রয়াত চেয়ারম্যান মাসাতোশি ইতোর সন্তান) ষষ্ঠ, ৪০০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে আকিও নিতোরি অষ্টম ও ৩৮৫ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে মোসাহিরো মিকি দশম স্থানে রয়েছেন। ফোর্বসের বৈশ্বিক তালিকায় প্রথম স্থান পাওয়া বার্নার্ড আর্নল্ট ও পরিবারের ব্যবসাও ফ্যাশন ও খুচরা বিক্রি। তাদের সম্পদের পরিমাণ ২২ হাজার ২৪০ কোটি ডলার।

তাকেমিৎসু তাকজাকি

ফোর্বসের তালিকায় এবার জাপানের দ্বিতীয় শীর্ষ বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি হয়েছেন উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তা তাকেমিৎসু তাকজাকি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলার। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসায়োশি সন ২ হাজার ৯০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে তৃতীয়। নোবুতাদা সাজি অ্যান্ড ফ্যামিলি ১ হাজার ৩০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে চতুর্থ স্থান পেয়েছে, তাদের ব্যবসা খাদ্য ও পানীয়। সপ্তম স্থান পাওয়া হিদেয়িকু বুসুজিমা অ্যান্ড ফ্যামিলির নিট সম্পদমূল্য ৪১০ কোটি ডলার। তারা জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ে জড়িত।

মাসায়োশি সন

প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার সিস্টেম ইন্টেগ্রেটর অ্যান্ড কাস্টম সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক ওবিকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসাহিরো নোদা ৩৯০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে তালিকায় নবম স্থান পেয়েছেন। জাপানের প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাঁর সম্পদই সবচেয়ে বেশি।

কোভিড মহামারি-পরবর্তীকালে সীমান্ত খুলে দেওয়ায় আবার পর্যটক বেড়েছে, সেই সঙ্গে ভোক্তাদের ভোগব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দুটো প্রবণতা ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে জাপানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে দেশটির শেয়ারবাজারে এক বছরে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। সেই সুবাদে জাপানের শীর্ষ ৫০ ধনীর সম্মিলিত সম্পদ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯২ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

নোবুতাদা সাজি

বিশ্বে বর্তমানে সব মিলিয়ে শতকোটিপতি আছেন ২ হাজার ৭৮১ জন, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আর এই সংখ্যাটা গত বছরের তুলনায় ১৪১ জন বেশি। শতকোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মোট সম্পদমূল্যও বেড়েছে। সার্বিকভাবে তাঁদের সম্পদের মূল্য এখন ১৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের চেয়ে ২ লাখ কোটি এবং ২০২১ সালের তুলনায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার বেশি।