২৫ হাজার টাকা মজুরির সঙ্গে ১০% বৃদ্ধি দাবি

তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য আবারও ২৫ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি দাবি করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা। একই সঙ্গে মোট মজুরির ৬৫ শতাংশ মূল মজুরি, প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) এবং ৭টির পরিবর্তে ৫টি গ্রেড ঘোষণার দাবি জানান তাঁরা।

পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে আজ মঙ্গলবার মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন। ১১টি শ্রমিক সংগঠন পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন নামের এই জোট গঠন করে।

আজকের সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছয় মাসেও মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করতে পারেনি মজুরি বোর্ড। মালিক ও শ্রমিক কোনো পক্ষ মজুরি প্রস্তাবই দেয়নি। এখন আইনের সুবিধা নিয়ে আবারও বোর্ডের সময় বাড়ানো হয়েছে। এই কালক্ষেপণকে শ্রমিকদের জীবনের সঙ্গে নিষ্ঠুর পরিহাস বলে তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা।

সমাবেশে বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।

শ্রমিকনেতারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের পরিবেশ জটিল হয়ে উঠছে। এই ঘোলাটে সময়ে শ্রমিকদের নামমাত্র মজুরি বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে মালিকপক্ষ। অথচ শ্রমিকদের খেয়েপরে বাঁচতে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এই বিবেচনায় অবিলম্বে মজুরি ঘোষণার আহ্বান জানান নেতারা।

তৈরি পোশাকশ্রমিকদের জন্য বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকার নিম্নতম মজুরি প্রস্তাব সম্পর্কে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা বলেন, শ্রমিক পরিবারের দুজন উপার্জনকারী ও খাদ্যতালিকায় প্রাপ্তবয়স্কের জন্য মাছ, মাংস ডিম না রেখে কোনোমতে একটি খাবারের বাজেট করেছে সিপিডি। সংস্থাটির গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে, তারা শ্রমিককে কেবল কারখানার উৎপাদনের যন্ত্র ও শ্রমিক হিসেবেই বিবেচনা করেছে। শ্রমিকেরা কম খাবে, কম পুষ্টি পাবে, সুচিকিৎসা পাবে না—এসব বিবেচনা নিয়ে সিপিডি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেটি শ্রমিকেরা কখনো গ্রহণ করতে পারবে না।

গত রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি পোশাকশ্রমিকদের মজুরিসংক্রান্ত গবেষণা প্রস্তাব তুলে ধরে। সংস্থাটি পোশাকশ্রমিকদের জন্য ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা নিম্নতম মজুরি প্রস্তাব করে। এই মজুরির ৫৫ শতাংশ মূল মজুরি এবং মূল মজুরির ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া ধরা হয়। এ ছাড়া মোট মজুরির ৭ শতাংশ খাদ্য ভাতা, ৫ শতাংশ চিকিৎসা ভাতা, সাড়ে ৩ শতাংশ যাতায়াত ভাতা এবং সন্তান লালন-পালনের জন্য ২ শতাংশ ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডকে একীভূত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা। পোশাকশ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণে ছয় মাস আগে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয়। ইতিমধ্যে এই বোর্ডের তিনটি সভা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শ্রমিক বা মালিক কোনো পক্ষই মজুরি প্রস্তাব দেয়নি। ফলে নতুন করে মজুরি বোর্ডের সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।