আমদানির খবরে পাইকারিতে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম, খুচরায় প্রভাব নেই

পেঁয়াজফাইল ছবি: প্রথম আলো

ভারত সরকার বাংলাদেশসহ ছয় দেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে—এ খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকার মতো কমলেও খুচরা বাজারে এখনো প্রভাব পড়েনি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, শাহজাহানপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে জানা গেছে, খুচরায় কেজিপ্রতি দেশি নতুন জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। কোথাও কোথাও পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১০৫ টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে এসব পেঁয়াজ মানে একটু পিছিয়ে।

তিন-চার দিন ধরে ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম এ অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দর-কষাকষি করলে কোথাও কোথাও পেঁয়াজের দাম খুচরায় কেজিতে পাঁচ টাকা কম পড়ছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়ছে না বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন।

শাহজাহানপুর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ফেনি জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আজহার উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল ১০৮ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি; সব খরচের পরে যা ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ থাকে না। এই পেঁয়াজ শেষ হলে নতুন পেঁয়াজ নিয়ে আসব।’ তবে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে মগবাজারে ভাই ভাই স্টোরের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, পেঁয়াজের বাজার বাড়তির দিকে ছিল, সেই অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে। দাম এখনো সেভাবে না কমলেও আমদানির খবরে দু-এক দিনের মধ্যে কিছুটা কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খুচরা বাজারে এখনো বড় প্রভাব না পড়লেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা গত রাতে কেজিতে পাঁচ টাকার মতো কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন। এই পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমতে শুরু করবে। দাম বাড়লে হঠাৎ যেভাবে বাজার চড়ে যায়, সেভাবে এখন পেঁয়াজের দাম কমবে না বলেই ব্যবসায়ীদের ধারণা।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম, সে জন্য এখনো বড় প্রভাব পড়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তবে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে কেজিপ্রতি দামে বড় পতন হবে বলে মনে করেন তিনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীরা, আজ মানভেদে এক পাল্লায় (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। মানের সঙ্গে আপস করলে আরেকটু কমেও পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। সেখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতকাল তারা পাইকারিতে যে পেঁয়াজ ১০২ থেকে ১০৫ টাকায় কিনেছিলেন, আজ তা কিনেছেন ৯৭ থেকে ১০০ টাকায়—পাইকারিতে দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকার মতো কমেছে। আমদানি হলে কিংবা দেশের পেঁয়াজ বাজারে বেশি পরিমাণে এলে দাম কমে যাবে বলে মনে করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

এদিকে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের সবজির পাইকারি বাজারে সাত দিন ধরে পেঁয়াজের দামে পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোর বিরামপুর প্রতিনিধি। ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেঁয়াজ ১০০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে। পরের দিন থেকে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা কমে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এখনো পাইকারিতে সেই দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে; খুচরা বাজারে যার দাম প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

বিরামপুর পৌর শহরের নতুনবাজার পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের কৃষকেরা যে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন, সেগুলো এখন প্রায় শেষের পথে। জমিতে থাকা দ্বিতীয় ধাপের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে আরও প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে। জামালগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট ও আক্কেলপুর এলাকা থেকে বিরামপুরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ আসছে। দু-এক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমতে পারে।

দেশের যে কটি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার মধ্যে হিলি অন্যতম। হিলি বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক। আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বাজারে প্রকারভেদে দেশি জাতের পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

ভারত সরকার দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ খবরের পরপরই বাংলাদেশের বাজারে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ছয়টি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমিত দিয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এসব দেশে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে দেশটির কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। তবে কী পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে কিংবা কবে থেকে রপ্তানি হবে, সে বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম কিছু জানাতে পারেনি। যেসব দেশে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে, সেই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, বাহরাইন, ভুটান ও নেপাল।