কার জন্য কেমন ফ্ল্যাট

ফ্ল্যাট কেনার আগে নানা ভাবনায় থাকেন ক্রেতারা। কষ্টের টাকায় ফ্ল্যাট কেনার পর যদি দেখা যায়, সেটি পরিবারের সদস্যদের জন্য উপযুক্ত নয়—মন খারাপই হওয়ার কথা। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগেই এটির আয়তন নিয়ে ভাবা উচিত।

এ ব্যাপারে দেশা আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক এহসান ইমরান বলেন, ‘পরিবারের সদস্য অনুযায়ী ফ্লাটের আয়তন নির্বাচন করা উচিত। চাইলে আপনি বড় আয়তনের ফ্ল্যাট কিনতে পারেন । কিন্তু কখনোই পরিবারের সদস্য অনুযায়ী ছোট আয়তনের ফ্ল্যাট কেনা উচিত নয়।

তাহলে বিষয়টি বসবাসের জন্য স্বাস্থ্যকর হবে না। ক্রেতার পছন্দ ও চাহিদার কথা মাথায় রেখেই রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো ফ্ল্যাটের ডিজাইন করে থাকে। আয়তনের পাশাপাশি অনেকেই প্রাকৃতিক সবুজ খুব পছন্দ করেন। সে কথা মাথায় রেখে বাড়িটির চারপাশে সবুজের ছোঁয়া আনার চেষ্টা করা হয়। সব মিলিয়ে বাড়ির ডিজাইনে গতানুগতিকতার সঙ্গে আধুনিকতার সংমিশ্রণ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানগুলো।’

আাপনার জন্য কোন ফ্ল্যাট

সাধ্যের মধ্যেই ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবতে হবে আপনাকে। তবে টাকার পাশাপাশি আপনার পরিবারের সদস্যদের উপযোগী ফ্ল্যাট কেনা উচিত। ধরুন, আপনার পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৬। কিন্তু আপনি ফ্ল্যাট কিনলেন দুই রুমের। তাহলে সেই ফ্ল্যাটে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ থাকবে না।

ছোট ফ্ল্যাটে আগ্রহ

ঢাকা শহরে ছোট পরিবারের সংখ্যাই বেশি। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের চাহিদাই বেশি।

গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় এ ধরনের ফ্ল্যাটই বেশি। ফ্ল্যাট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই আয়তনের ফ্ল্যাটের চিন্তা মাথায় রেখেই ভবনের নকশা করে। এ ধরনের ফ্ল্যাটে দুটি থেকে তিনটি বেডরুম থাকে। মোটামুটি ছোট পরিবারের জন্য এ ফ্ল্যাটগুলো বেশ আরামদায়ক। রাজধানীর মিরপুর, বনশ্রী, খিলগাঁও, রামপুরা, আজিমপুর, মোহাম্মদপুরে ছোট আকারের ফ্ল্যাট বেশি রয়েছে।

চাহিদা রয়েছে মাঝারি আয়তনের ফ্ল্যাটেরও

যাঁরা বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন, তাঁদের কাছে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। তাই অনেক ক্রেতার কাছে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটই পছন্দ। মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটে সাধারণত ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের হয়ে থাকে। তিন থেকে চারটি বেডরুম থাকে এ ফ্ল্যাটগুলোতে।

চার থেকে ছয়জনের পরিবারের জন্য এ ফ্ল্যাটগুলো আদর্শ। লালমাটিয়া, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, বেইলি রোড, উত্তরা, খিলক্ষেত, নিকেতনসহ রাজধানীর প্রায় সব অঞ্চলেই মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট পাওয়া যায়।

বড় পরিবার, বড় ফ্ল্যাট

যাঁরা একসঙ্গে মা–বাবা, একের অধিক ভাইবোন মিলে বসবাস করেন, তাঁদের জন্য বড় ফ্ল্যাটের বিকল্প নেই। যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে এ ফ্ল্যাটগুলো উপযুক্ত। বড় ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার বর্গফুট থেকে শুরু। ফ্ল্যাটের কক্ষগুলোর সংখ্যা পরিবারের সদস্যের ওপর নির্ভর করে।

মূলত বড় ফ্ল্যাটে চারের অধিক কক্ষ থাকে। এ ছাড়া খাবার ও বসার ঘরের আয়তনও বেশ বড় থাকে। অনেকেই বড় ফ্ল্যাটে লাইব্রেরি বা লেখালেখির কক্ষ তৈরি করে। বড় ফ্ল্যাটের ভালো সুবিধা হলো, ফ্ল্যাটগুলো বেশ খোলামেলা থাকে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুর, ডিওএইচএস এলাকায় বড় আকারের ফ্ল্যাট বেশি পাওয়া যায়।

ডুপ্লেক্স বাড়ি

শুধু রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকাই নয়, বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকায়ও ডুপ্লেক্স বাড়ি বানানোর প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ডুপ্লেক্স বাড়ি মূলত দোতলা বাড়ি। এ বাড়িতে সবসময় কমন স্পেসগুলো থাকবে নিচতলাতে।

যেমন ড্রইংরুম, ডাইনিংরুম, কিচেন, গেস্টবেড, স্টোরসহ অন্যান্য যাবতীয় কমন রুমগুলো থাকবে। দোতলায় থাকবে পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত বেডরুমগুলো। এবং একটু একত্রে সময় কাটানোর জন্য থাকবে ছোট একটা লিভিংরুম। বেডরুমগুলোর সঙ্গে অ্যাটাচ বাথরুম ও বারান্দা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এসব বাড়ি ব্যয়বহুলও বটে। উচ্চবিত্ত ও শৌখিন মানুষদেরই ডুপ্লেক্স বাড়ি পছন্দ।