দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা বিশ্বে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমবে

চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৩ শতাংশ।

২০২৩ সালে অর্থনীতির ইতিবাচক পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভাষ্য হচ্ছে, চলতি বছর মন্দা না হলেও প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে। এবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানাল, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার কর্মসংস্থানের গতি অর্ধেক কমে যাবে।

চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৩ শতাংশ। অর্থনীতির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্পর্কে সবাই যা বলছে, আইএলও তাই বলেছে। অর্থাৎ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতির এই অবনতি হবে।

‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক: ট্রেন্ডস ২০২৩ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে মাত্র ১ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর সারা বিশ্বে বেকার তরুণদের সংখ্যা প্রাক্‌-মহামারি সময়ের নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ বেশি থাকবে বলে জানিয়েছে আইএলও।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় বেকারের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৫ কোটি ৪১ লাখ, যা গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির মূল গন্তব্য ইউরোপ। কিন্তু সেখানে মন্দাভাব থাকায় বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইএলও। শ্রমবাজারে শ্লথগতির কারণে পারিবারিক ব্যয় সেভাবে বাড়বে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের ভেতরে ও দেশে দেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে কারণে মহামারির প্রভাব কাটিয়ে যে উঠতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তা খুবই অসম।

বিভিন্ন দেশ যখন করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠছিল, তখন শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাব বিশ্বের সব দেশেই অনুভূত হচ্ছে। কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া মূলত সে কারণেই। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
তবে সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মন্দ নয়।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, চলতি বছর এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ভারতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের কারণে এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মন্দ নয়। তবে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ইতিমধ্যে একদফা কমানো হয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশটির আর্থিক খাতে মাত্রাতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও এই অঞ্চলে বিশ্ববাজারের প্রভাব যে কতটা, তা গত এক বছরে বোঝা গেছে। বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়লে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশের সরকারকে বিপুল ভর্তুকি দিতে হয়। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ে।

ঝুঁকির খাত হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানে গত বছর প্রলয়ংকরী বন্যা হয়েছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি

২০২৩ সালে বৈশ্বিক কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ১ শতাংশ, ২০২২ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি বছর কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির সঙ্গে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির এই হারের মিল আছে।

এদিকে ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার কমেছিল ৫ শতাংশ। করোনার অভিঘাতে তা আবার বেড়েছে। করোনা মহামারির সময় বিশ্বজুড়ে শোভন কর্মসংস্থান কমেছে। অনেক মানুষ চাকরি হারিয়ে গিগ অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছেন। এই মানুষেরা পণ্য সরবরাহের মতো কাজে যোগ দিয়েছেন।

আইএলওর তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে ছিলেন। অর্থাৎ কর্মসংস্থানে যতটা গতি এসেছে, তা হয়েছে মূলত অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে কর্ম জগতে একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ব্যবসায়িক পরিবেশে একধরনের বিষণ্নতা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এতে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমেছে।

এ ছাড়া ২০২২ সালে বিশ্বের ২১ কোটি ৪০ লাখ শ্রমিক চরম দারিদ্র্যের কবলে ছিলেন। অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায়, তাঁদের দৈনিক মজুরি ছিল ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে।

এর আগে আইএলওর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার বেলায় বাংলাদেশ সবার পেছনে। শুধু তা-ই নয়, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের ন্যূনতম মজুরি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দারিদ্র্যসীমার নিচে। ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা বিবেচনায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল ৪৮ ডলার। তবে তৈরি পোশাক খাতের মজুরি এর প্রায় দ্বিগুণ।