বিধিনিষেধ কাজ করছে না, রাশিয়ার তেল রপ্তানি আবার যুদ্ধের আগের পর্যায়ে

জ্বালানি তেল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত মাসে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের রপ্তানি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে তেল রপ্তানি থেকে দেশটি অতিরিক্ত ১৭০ কোটি ডলার আয় করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো বিধিনিষেধ আরোপ সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল রপ্তানি বাড়ছে।

প্যারিস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য বলছে, গত মাসে রাশিয়ার তেল রপ্তানি প্রতিদিন ৫০ হাজার ব্যারেল বেড়ে ৮৩ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছে। তাদের ধারণা, মস্কো তেলের উৎপাদন কমায়নি। ‘বরং রাশিয়া সম্ভবত উৎপাদন বাড়িয়ে তাদের রাজস্ব ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে,’ এক বিবৃতিতে বলেছে সংস্থাটি।

এপ্রিলে তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তবে গত বছরের ওই একই মাসে রাশিয়ার যে আয় হয়েছিল, তার তুলনায় এই আয় ২৭ শতাংশ কম। আর তেল ও গ্যাস খাত থেকে দেশটির রাজস্ব আয় ৬৪ শতাংশ কমে গেছে।

ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ এবং অস্ট্রেলিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মিলে রাশিয়ার তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, মস্কো যাতে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যথেষ্ট তহবিল সংগ্রহ করতে না পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। তবে যেসব দেশ বা কোম্পানি তেলের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি মেনে চলবে, পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মস্কো তাদের সঙ্গে ব্যবসা না করার হুমকি দিয়েছে।

রাশিয়া একই সঙ্গে তেলের উৎপাদন প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস তেলের উৎপাদন কমাতে রাজি হয়েছে। এই জোটে রয়েছে অন্যতম বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে, এপ্রিলে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন প্রতিদিন ৯৬ লাখ ব্যারেল ছিল। তেলের উৎপাদন কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা দেশটি ঠিক করেছে, তাতে পৌঁছাতে হলে তাকে উৎপাদন প্রতিদিন আরও তিন লাখ ব্যারেল কমাতে হবে।

সংস্থাটি বলেছে, ‘অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করতে রাশিয়াকে খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে বলে মনে হয় না। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট বাজারব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। ফলে অনেকে ক্ষেত্রে ওপেক প্লাস সদস্যদের ব্যবসা নষ্ট করে রাশিয়া ক্রেতা পেয়ে যাচ্ছে।’

রাশিয়া বর্তমানে যত তেল রপ্তানি করছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশের গন্তব্য চীন ও ভারত বলে জানাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি।

চীন তিন বছর ধরে চালু থাকা কোভিড বিধিনিষেধ থেকে বেরিয়ে আসার কারণে বিশ্বে তেলের চাহিদা ২২ লাখ ব্যারেল বাড়বে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। ফলে পৃথিবীতে তেলের চাহিদা হবে প্রতিদিন ১০ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল। এর আগে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, নতুন হিসাব তার চেয়ে দিনে দুই লাখ ব্যারেল বেশি।