আইনে আছে কর অব্যাহতি, এনবিআর বলছে কাটা হবে কর

দেশের শেয়ারবাজারের সব মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদি আমানত (এফডিআর) থেকে প্রাপ্ত মুনাফা বা সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের জন্য সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সম্পদ ব্যবস্থাপকদের মধ্যে নির্দেশনাটি নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, নতুন আয়কর আইনে মিউচুয়াল ফান্ডের সব ধরনের আয়কে করমুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন এনবিআরের ব্যাখ্যায় উৎসে কর কাটা শুরু হলে তাতে মিউচুয়াল ফান্ডের আয় কমবে এবং এ খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১–২২ সাল পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদি আমানতের সুদ বা মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসে কর কাটা হয়নি। ২০২২ সালে প্রথম একটি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের এফডিআরের সুদ থেকে উৎসে কর কর্তনের বিষয়ে এনবিআরের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তখন এনবিআর জানায়, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদি আমানতের সুদ থেকে উৎসে কর কর্তন করতে হবে। ওই ব্যাখ্যার পর থেকে কোনো কোনো ব্যাংক উৎসে কর কাটতে শুরু করে। এরপর বিষয়টি নিয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপকেরা এনবিআরের শরণাপন্ন হন। তখন এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয় নতুন আয়কর আইনে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন স্বীকৃত সত্তা মিউচুয়াল ফান্ড, বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের অর্জিত যেকোনো আয় কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে।

১ আগস্ট এনবিআর সব মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদি আমানতের সুদ থেকে উৎসে কর কর্তনের নির্দেশনা জারি করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর কাছে উৎসে কর কর্তনের নির্দেশনা পাঠায়।  

সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যাংকে মেয়াদি আমানত, ট্রেজারি বিল–বন্ডসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়। মিউচুয়াল ফান্ড গঠিত হয় উদ্যোক্তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থে। সেই অর্থের সুরক্ষার জন্য শেয়ারবাজারের পাশাপাশি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন খাতেও এ অর্থ খাটানো হয়। শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে যে মুনাফা হয়, তা থেকে বছর বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। তাই বাড়তি করারোপের কারণে ফান্ডের আয় কমলে তাতে মূলত বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।