২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ওয়েজ আর্নার্স বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ ফিরে পাচ্ছেন তিন ধরনের পেশাজীবী

চার বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর আজ বুধবার আইআরডি সচিব আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা যাতে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন, সে জন্য আমরা কাজ করছি। এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হবে শিগগিরই।’

দেশে ১৯৮৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড চালু করা হয়। চালু হওয়ার পর থেকে ৩২ বছর ধরে এই বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের। কিন্তু ২০২০ সালে তাঁদের এ সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের এ বন্ডে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে আসছিল। ‘ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কেনার যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট বিধি অধিকতর স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে প্রথমে ২০২০ সালের আগস্টে আইআরডি এবং পরের মাস সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে বলে দেয় যে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করলেও তাঁরা ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনতে পারবেন না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং, এয়ারওয়েজ কোম্পানিতে চাকরিরত বাংলাদেশি মেরিনার ও পাইলট/কেবিন ক্রুদের এবং বাংলাদেশি মালিকানাধীন শিপিং/এয়ারওয়েজ কোম্পানিগুলোর বিদেশে থাকা অফিসে নিয়োগ পাওয়া এবং তা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী মেরিনার ও পাইলট/কেবিন ক্রুদের ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কেনার সুযোগ নেই।’

তবে বিদেশে অবস্থান করা যেকোনো নাগরিক, লিয়েনে থাকা সরকারি কর্মচারী এবং বাংলাদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য সুযোগটি কখনোই বন্ধ করা হয়নি।

বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী ওয়েজ আর্নার্স হয়েও নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করতে না পারায় তাঁদের একধরনের মনোবেদনা ছিল। বিদেশি ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমেই তাঁরা মজুরি ও বেতন দেশে পাঠান। তাঁদের মাধ্যমে দেশে বছরে প্রায় ৬০ কোটি ডলার আসে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আইআরডিতে সুযোগটি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বহুবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আমলে নেয়নি আগের সরকার।

বিএমএমওএ যুক্তি দিয়ে বলেছে, পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অবসরোত্তর কোনো সুবিধা নেই নাবিকদের। এই পেশাজীবীদের সংখ্যা এখন ১২ হাজারের বেশি। বাংলাদেশি একজন মেরিন কর্মকর্তা যখন বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে অবস্থান করেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তখন তিনি ওই দেশের আওতায় থাকেন। সাধারণত ৪ থেকে ৯ মাসের চুক্তি হয় তাঁদের। চাকরির পূর্ণ মেয়াদকালে তাঁর পক্ষে নির্দিষ্ট কোনো দেশে অবস্থানের প্রমাণ দেখানো সম্ভব নয়।

বিএমএমওএ বলেছে, জাহাজে যোগ দেওয়া থেকে জাহাজ থেকে নামা পর্যন্ত সংরক্ষিত সব তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ দলিল এবং বিশ্বের সব দেশে স্বীকৃত। আর ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিধি ১৯৮১ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী ওয়েজ আর্নার্সের সংজ্ঞা ও বন্ড কেনার যোগ্যতা অনুযায়ীই নাবিকেরা এই বন্ড কিনতে পারেন।

বিএমএমওএর সহসভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন কাদ্‌রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমরা ন্যায্য দাবিটি করে আসছিলাম। শোনা যাচ্ছে বর্তমান সরকার তা মেনে নেবে। এটি হলে নিশ্চিতভাবে বৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয় আসা বাড়বে।’