বাজেটের পদক্ষেপে হতাশ বিনিয়োগকারীরা

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক–কর হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়। বাজেটের এসব উদ্যোগের প্রভাব কী হতে পারে—তা নিয়ে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিমত নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।

সাইফুল ইসলাম সভাপতি, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)

বাজেটে সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনিতেই বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। এ অবস্থায় বাজেটকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে আমাদের সেসব দাবি তো পূরণ হয়নি, উল্টো নতুন করে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেট–পরবর্তী অর্থমন্ত্রী ও বিভিন্ন সংস্থার সংবাদ সম্মেলন থেকে শেয়ারবাজার বিষয়ে যেসব বক্তব্য এসেছে, তা বিনিয়োগকারীদের চরমভাবে হতাশ করেছে। ফলে বাজেট–পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

নতুন অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ক্ষেত্রে করারোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। নীতিগতভাবে আমরা মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপের বিপক্ষে নই। তবে বর্তমানে বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে এই সিদ্ধান্ত মোটেই সময়োপযোগী হয়নি। এ সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বাজারবিমুখ হবেন।

শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে বাজেটে আমরা তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তার বিপরীতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার শর্ত সাপেক্ষে আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। বাজেটে নেওয়া সরকারের এ উদ্যোগ ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো আগ্রহ তৈরি করবে না।

কিছুদিন আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট পথনকশা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেটিও দেখলাম না। এ ছাড়া বাজেট সামনে রেখে শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্টদের দাবি ছিল লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত কর পরিহারের উদ্যোগ নেওয়া। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো কর প্রদানের পর যে মুনাফা করে তা থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তারপরও ওই লভ্যাংশ প্রদানকালে কোম্পানির পক্ষ থেকে ১০ শতাংশ হারে কর কেটে রাখা হয়। এরপর এই আয় যখন বিনিয়োগকারীর আয়ে যুক্ত হয়, তখন তার ওপর আবার কর দিতে হয়। এভাবে লভ্যাংশের ওপর বারবার কর দেওয়ার বিধানটি বাতিলের দাবি করেছিলাম আমরা। কিন্তু সেই দাবিও পূরণ হয়নি।

সরকার আগামী অর্থবছর থেকে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ করেছে। কিন্তু কেউ যদি বছরের পর বছর মূলধনি লোকসান করে, সেটি কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে দেওয়া হয়নি।

সাইফুল ইসলাম

সভাপতি, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)