নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস–বিদ্যুৎ চান ব্যবসায়ীরা

ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমেছে। এ জন্য সরকারের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে তাঁরা এ দাবি জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক জ্বালানিসংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে তা পুরো অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে। লোডশেডিং রেশনিং করে করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখন শিল্প খাতেও লোডশেডিং হচ্ছে, আবার বাসাবাড়িতেও হচ্ছে। এতে কার্যকর কিছু হচ্ছে না।

সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে জ্বালানি নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘদিন থাকবে। এ জন্য আগামী ১০-২০ বছরে দেশের জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে।

সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) পরিচালক আজিজুল হাকিম বলেন, ‘সিরামিক খাতে সার্বক্ষণিক গ্যাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা বিগত তিন মাস সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টা গ্যাস পাচ্ছি। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে অচিরেই এটি রুগ্‌ণ শিল্প হয়ে যাবে।’

ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ী শাহরিয়ার স্টিল মিলসের (এসএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে মাসুদুল আলম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত গ্যাস পাচ্ছি না, ব্যাংকগুলো ঋণপত্র দিতে চাইছে না। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। সব মিলিয়ে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দীন দোকানপাট ও বিপণিবিতানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লোডশেডিং বন্ধের দাবি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, লোডশেডিংয়ের রেশনিং ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি হলো, দেশের কৃষি ও শিল্প খাতকে বাঁচিয়ে রেখে বাকিদের দেখা। এ জন্য দেশের স্বার্থে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান করলে হয়তো কিছু গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। তবে এতে গ্যাসের উৎপাদন খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। তাই এ নিয়ে বড় কোনো অঙ্গীকার করতে পারব না। কিন্তু যতটুকু সামর্থ্য আছে, সে অনুসারে অনুসন্ধানের চেষ্টা করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকার শিল্প খাতকে সুরক্ষা দিতে জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানি খরচ অনুসারে দাম নির্ধারণ করছে না। রপ্তানি খাতে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য সরকার নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব (ভর্তুকি) নিচ্ছে। কিন্তু সরকারের সক্ষমতার চেয়ে বেশি দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্যই সাশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে। লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় বড় শিল্প এলাকা চিহ্নিত করেছি। এসব স্থানে লোডশেডিং হবে না। কিন্তু আবাসিক এলাকা থাকায় অনেক কারখানা হয়তো লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়ছে।’

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়ানোর তাগিদ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক বদরূল ইমাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে জ্বালানিসংকট চলছে, সেটা হওয়ার কথা ছিল না। গত ২২ বছরে গ্যাস অনুসন্ধান করেছি মাত্র ২৫টি। বলা যায়, নিজস্ব উৎসের গ্যাস খুঁজে পেতে আমরা তেমন কিছুই করিনি।’

জ্বালানিসংকট মোকাবিলায় কয়লাখনি অনুসন্ধান ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী।

জ্বালানিসাশ্রয়ী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কর-শুল্ক অবকাশসুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ। তিনি বলেন, ‘জ্বালানিসাশ্রয়ী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের অনেক শুল্ক দিতে হয়। এটা থেকে আমরা বের হতে চাই।’

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিদ্দিক জুবায়ের, জ্বালানিবিষয়ক ম্যাগাজিন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার-এর সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন।