কৃষিতে বাণিজ্যিক সেবাদানকারীদের ভূমিকা বাড়ছে 

কম্বাইন্ড হারভেস্টরের মাধ্যমে মাড়াইয়ের পর জমির ধারে ধান সাজিয়ে রাখা হচ্ছে
ছবি: মেটালের সৌজন্যে

নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের কৃষিনির্ভর অনেক পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম এখন এ কাজে আগ্রহী নয়। ফলে তাদের জমি ইজারা বা ভাড়া নিয়ে চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত সার, বীজ ও উন্নত যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন পরিষেবা দিয়ে সহায়তা করছেন একশ্রেণির মানুষ। ইজারা নিয়ে চাষের পাশাপাশি দিন দিন কৃষিতে এই মধ্যবর্তী বাণিজ্যিক সেবাদানকারীদের ভূমিকাও বাড়ছে।

গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন চলছে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অধিবেশনে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের প্রফেসরিয়াল ফেলো ও কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল। আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জিওফ উড। 

অনুষ্ঠানে এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে তিন ধরনের চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা আছে। প্রথমত, পরিবারের জমিতে নিজেদের প্রয়োজনীয় শস্য উৎপাদন। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্যিকভাবে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে বড় আকারে কৃষিপণ্য উৎপাদন। তৃতীয়ত, হাইব্রিড ধরন। অর্থাৎ পারিবারিক জমি ও বিভিন্ন পরিষেবা ভাড়া নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদ করেন।

কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, কৃষিতে উদাসীনতা, নগরায়ণ ও ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা না থাকা ইত্যাদি কারণে দেশে পরিবারনির্ভর কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ কমছে। তাদের অনুপস্থিতির কারণে কার্যত গ্রামীণ কৃষি উৎপাদনপ্রক্রিয়া এখন মধ্যবর্তী সেবাদানকারীদের হাতে চলে এসেছে। এঁদের এক দল ভূমিমালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে জমি চাষ করছেন। আরেক দল কৃষি উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় দিচ্ছে সব ধরনের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও প্রযুক্তিসেবা। 

এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, নতুন প্রযুক্তি আগের কৃষি উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এখন গরু দিয়ে চাষের বদলে পাওয়ারটিলার ব্যবহৃত হচ্ছে। মাটি কাটার শ্রমিকের পরিবর্তে এসেছে আধুনিক খননযন্ত্র। ফলে যাঁরা আগে শ্রমিক ছিলেন, তাঁদেরই একটা অংশ জমি ভাড়া নিচ্ছেন, আরেকটা অংশ এসব যন্ত্র ও প্রযুক্তির সেবা দিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে বিনায়ক সেন বলেন, ‘আজকের আলোচনার মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন ধরনের গবেষণার জায়গা তৈরি হলো। কৃষি খাতে নতুন জ্ঞান ও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি খাতে সেবাদানকারী নতুন শ্রেণি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে জমির মালিক ও কৃষকেরাও কৃষিকাজের সঙ্গে বেশি পরিমাণে যুক্ত হতে পারছেন। ফলে কৃষি অর্থনীতিতে আগের থেকে স্থায়িত্ব বেড়েছে।’