নিউ সুপার মার্কেটে আগুন: দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে বিপাকে

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লেগেছে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার অদূরে দোহার থেকে পরিবারের দুই সদস্যকে নিয়ে শেখ শহীদুল ইসলাম এসেছেন রাজধানীর নিউমার্কেট-গাউছিয়া এলাকায়। লক্ষ্য ঈদের কেনাকাটা করা। নিউ মার্কেটের কাছাকাছি আসার সময় খেয়াল করেন, পুলিশ অনেক মানুষকে আটকে দিচ্ছে। এরপর হেঁটে নূরজাহান মার্কেটের সামনে আসতে পেরেছেন বটে, কিন্তু দোকানপাট সব বন্ধ। কেনাকাটা করতে পারেননি।

পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরামর্শ করছিলেন শহীদুল, কী করা যায়।

শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কম দামে কেনাকাটা করা যায়। সে জন্য প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা এখান থেকেই করি। সকালে জানতে পারিনি এখানে এই অবস্থা। এখন এসে তো বিপদে পড়লাম। এমনিতেই গরমের দিন, সময়–সুযোগ করে বারবার বের হওয়া কষ্ট। এখন সবাই মিলে ভাবছি, কোথায় গেলে কেনাকাটা শেষ করতে পারব।’

শুধু শহীদুল ইসলামই নন, আজ শনিবার সকাল থেকে অনেক ক্রেতারই এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় আশপাশের সব মার্কেট বন্ধ থাকায় ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারেননি। রাস্তা বন্ধ থাকায় যানবাহন চলাচলও সীমিত। তাতে পরিবার নিয়ে আসা লোকজন হেঁটে এলাকা ত্যাগ করেছেন। কেউ কেউ অন্য কোনো শপিং মলে গেছেন, আবার শপিং না করেই বাড়িতে ফিরে গেছেন অনেকে।

ডেমরা এলাকা থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে গাউছিয়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসে ফিরে যাওয়ার সময় গৃহিণী নাহার আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসার আগে জানতে পারলে নিশ্চয়ই আসতাম না। মেয়েদের নিয়ে এসে পড়লাম বিপদে। এখন যানবাহন না পাওয়ায় ফিরতেও পারছি না। আসা–যাওয়ার ভাড়া তো গেল। পাশাপাশি একটা দিনও নষ্ট হলো।’

তবে আগুন লাগার ঘটনা জানার পরও অনেকে এসেছেন। রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকা থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘শুনেছি যে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লেগেছে। তাতে যে এই এলাকার সবকিছু বন্ধ থাকবে, তা ধারণা করতে পারিনি। ছুটির দিন থাকায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসে এখন বিপদে পড়লাম। আমি বাদে পরিবারের অন্য সবাই আগেভাগে গ্রামে চলে যাবে। তাতে আজকের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ না করতে পারলে বিপদ।’

কম দামে কেনাকাটার জন্য নিউ মার্কেট-গাউছিয়ার চেয়ে ভালো জায়গা ঢাকায় কম আছে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যক্তি।

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় আশপাশের বেশ কয়েকটি মার্কেট বন্ধ আছে। এ কারণে এসব মার্কেটের কয়েক হাজার দোকানপাটে বেচাকেনা হচ্ছে না। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে এই আগুনে তাঁদের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

আগুনের সূত্রপাত আজ ভোরে। এরপর সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ। বন্ধ আছে বাটা সিগন্যাল থেকে নিউ মার্কেটে যাওয়ার পথও। মূলত আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কাজ যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তার পাশের দু-একজন ব্যবসায়ী দোকান খুললেও অধিকাংশ মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ।

সরেজমিন দেখা গেছে, নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব সুপার মার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, চাঁদনী চক, নিউ মার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ আছে।