স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিবসহ রাষ্ট্রের কোনো স্তরের মানুষই ত্রুটিমুক্ত নন। তবে দেশের উন্নয়নে সবাইকে সীমার মধ্যে থেকে নিয়ম মেনে কাজ করা উচিত।
আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইন্তেখাবুল হামিদ, প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ, সহসভাপতি মোহাম্মদ সোহেল রানা, আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। আবাসন খাতের ব্যবসা যাঁরা করেন, তাঁদের খারাপ চোখে না দেখার আহ্বান করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, তাঁরা সব সময় জায়গা দখল করেন না, সবাই খারাপ না।
তাজুল ইসলাম এ সময় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, রাজনীতিক, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের মধ্যেও খারাপ লোক আছেন। সচিবেরা সব ফেরেশতা হয়ে গেছেন, এ কথা ঠিক নয়। প্রকৃত পক্ষে কোনো মানুষের মধ্যে শতভাগ বিশুদ্ধতা পাওয়া যাবে না। লোভ–লালসা কেন থাকবে না, তবে তা সীমার মধ্যে থাকা উচিত।
আবাসন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ড্যাপের (ঢাকার নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) সভাপতি বানিয়েছেন। তবে আমি আস্থা নিয়ে বলছি, ড্যাপ প্রণয়নের কাজে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ছিলাম। তাই কেউ আমাকে শত্রু ভাববেন না। আমি আপনাদেরই একজন। ড্যাপ নিয়ে আপনাদের যৌক্তিক পরামর্শ থাকলে তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।’
অনুষ্ঠানে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘দেশের আবাসন খাত এখন বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ড্যাপ নিয়ে সমস্যা। সবকিছু মিলিয়ে দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা হতাশ। এ পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যবসা নিয়ে আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর উদ্দেশে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের আপনারা বাঁচান, তাঁদের সহযোগিতা করেন। আমরা অর্থসহায়তা কিংবা প্রণোদনা চাই না। শুধু নীতিগত সহায়তা চাই।’
আলমগীর শামসুল আলামিন আরও বলেন, ‘আপনি (মন্ত্রী) কথা দিয়েছেন, যেসব ক্ষেত্রে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) বাড়ানো যুক্তিসংগত হবে, তা বিবেচনা করবেন। এতে ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ড্যাপ নিয়ে আরও কিছু প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন। আশা করব, সেই সব সমস্যার সমাধান করবেন।’
রিহ্যাবের সহসভাপতি মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, এবারের আবাসন মেলায় কম দামে ফ্ল্যাট কেনার সর্বশেষ সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। কারণ, সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এরপর হয়তো দাম অনেকটা বেড়ে যাবে।
মেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত
রিহ্যাব মেলার আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এবারের আবাসন মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮০টি স্টল থাকবে। তার মধ্যে আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণসামগ্রীর স্টলও থাকবে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। তবে উদ্বোধনের দিন মেলায় প্রবেশ করা যাবে বেলা দুইটা থেকে। মেলায় একবার প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। আর পাঁচবার প্রবেশের জন্য মাল্টিপল টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা।
রিহ্যাব জানিয়েছে, গত বছর আবাসন মেলায় মোট ৩৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮ কোটি টাকার শুধু ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিং হয়েছিল। মেলায় ১৯ হাজারের বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছিলেন। এ ছাড়া ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৬২ হাজারের মতো ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে রিহ্যাবের আবাসন কোম্পানিগুলো।