সরাসরি গুদামে পণ্য পাঠানোর এইও সুবিধা পেয়েছে আরও ৯ কোম্পানি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

দেশের আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগ। এর ফলে এসব কোম্পানি কাস্টমসের প্রক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে। চার বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এই সুবিধা চালু ছিল।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের অনুষ্ঠানে এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে এইও সনদ তুলে দেওয়া হয়। ঢাকার এক হোটেলে হওয়া এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে এইও সনদ পেয়েছে, সেগুলো হলো ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড, সুনিভার্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, জিহান ফুটওয়্যার লিমিটেড, এসিআই গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট প্রাইভেট লিমিটেড, তোয়া পারসোনাল প্রোটেকটিভ ডিভাইস বাংলাদেশ লিমিটেড, কাটিংএজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওমেরা সিলিন্ডার্স লিমিটেড, এমবিএম গার্মেন্টস লিমিটেড এবং ফুটস্টেপস বাংলাদেশ লিমিটেড।

যা থাকছে এইও সুবিধায়
—কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশনের পরিবর্তে এইও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আঙিনায় পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে।
—বন্দরে পণ্য আসার আগেই বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ শুল্কায়নের কাজ শেষ করা যাবে।
—বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের এইও–সংক্রান্ত মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্টে (এমআরএ) থাকে, তাহলে বাংলাদেশের এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চালান ওই সব দেশের বন্দরেও একই সুবিধা পাবে।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমরা এইও কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে চাই। এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পণ্য সহজেই খালাস করতে পারবে। এটি দুই পক্ষের আস্থার সম্পর্ক।’

জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসা–বাণিজ্যে আরও বেশি আইনকানুন মেনে চলার বিকল্প নেই। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হলে নানা সমস্যায় পড়তে হবে। তাই এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

এইওর সুবিধাগুলো

এনবিআরের বিধিমালা অনুযায়ী, এইও সনদধারীরা ১০ ধরনের সুবিধা পাবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশনের পরিবর্তে এইও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আঙিনায় পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে। জাহাজ থেকে বা উড়োজাহাজ থেকে কিংবা সীমান্তের অন্য প্রান্ত থেকে পণ্য খালাস হয়ে সরাসরি চলে যাবে আমদানিকারকের গুদামে। এই প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শেষ হয়, সে জন্য শুল্ক বিভাগের বিশেষ দল কাজ করবে।

এ ছাড়া বন্দরে পণ্য আসার আগেই বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ শুল্কায়নের কাজ শেষ করা যাবে।

এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের এইও–সংক্রান্ত মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্টে (এমআরএ) থাকে, তাহলে বাংলাদেশের এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চালান ওই সব দেশের বন্দরেও একই সুবিধা পাবে।

বাংলাদেশ অবশ্য এখন পর্যন্ত কোনো দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করেনি। তবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য ১০০টির বেশি মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্টে (এমআরএ) আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।

বাংলাদেশে এইও সুবিধা ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। কিন্তু চার বছরেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু না হওয়ার কারণ সম্পর্কে কর্মকর্তারা করোনাভাইরাস মহামারির কথা উল্লেখ করেন। শুরুতে তিনটি ওষুধ কোম্পানি এইও সনদ নিয়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম চালায়।

কোম্পানিগুলো হলো বেক্সিমকো, স্কয়ার ও ইনসেপ্‌টা। এখন আরও ৯টি কোম্পানিকে এইও সনদ দেওয়া হলো।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘নাইন–ইলেভেন’ সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বব্যাপী পণ্য নিরাপদ চলাচলের উদ্যোগ নেয় বড় অর্থনীতির দেশগুলো। ২০০৫ সালে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেফ ফ্রেমওয়ার্ক চালু করে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউসিও)। সেখানে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর বা এইও ব্যবস্থা চালুর বিধান রাখা হয়।

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বাণিজ্য সহায়তা চুক্তি (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) হয়। এতে বাংলাদেশও সই করে। এই চুক্তির ৭ দশমিক ৭ অনুচ্ছেদে এইও ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়। এরপর পাঁচ বছর সময় লেগে যায় এইওর বিধিমালা তৈরি করতে।

১৭ কর্মকর্তা ও ৩ প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সম্মাননা

অনুষ্ঠানে তিনটি সরকারি সংস্থা এবং ১৭ জন শুল্ক কর্মকর্তাকে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সনদ দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা হলেন প্রথম সচিব নিয়ামুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ মিয়া, শাকিলা পারভীন, মহিবুল রহমান ভূঁইয়া, পায়েল পাশা, উপকমিশনার পারভেজ রেজা চৌধুরী, মিতুল বনিক, ইফতেখার আলম ভুইয়া, আয়শা সিদ্দিকা, জেবুন নেসা, সহকারী প্রোগ্রামার কামরুন নাহার, রাজস্ব কর্মকর্তা বিপ্লব বড়ুযা, অনিমেষ মণ্ডল, ফাহাদ চৌধুরী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামান খান।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।